জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩   ||   ফেব্রুয়ারি -এপ্রিল ২০২২

সম্পাদকের শুভেচ্ছাবার্তা

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামীন মানবসৃষ্টির সূচনা করেছেন আদম আ.-কে সৃষ্টি করার মাধ্যমে। সেখান থেকে মানবজাতির সৃষ্টির শুরু।

আল্লাহ জাল্লা শানুহুর ইচ্ছা হয়েছে তাঁর সেই সেরা মাখলুককে পরিপূর্ণতা দিতে এবং বিস্তৃত করতে। এর জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন হযরত আদম আ. থেকে মানবকুলের আদি মাতা হযরত হাওয়াকে। তাদের দুজনকে কেন্দ্র করেই আজকের মানবসভ্যতা। হযরত হাওয়ার সৃষ্টির মাধ্যমেই নারী জাতির মহত্বের প্রথম প্রকাশ ঘটে। কারণ, আল্লাহ তাআলা মানবতাকে পরিপূর্ণতা দেয়ার জন্য দু-জাতের দুজন মানুষকে তৈরি করেছেন। আল্লাহ চাইলে শুধু হযরত আদম থেকেও আরও অসংখ্য মানুষ তৈরি করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেটি করেননি। এ থেকে বোঝা যায়, পুরুষ এবং নারী উভয়ই মানবসভ্যতায় সমান অবদান রাখছে। গোড়ার দিক থেকে কারো অবদান অন্যের থেকে বেশি বা কম নয়; অথচ যুগে যুগে সেই আদম-হাওয়ার সন্তানরাই নিজেদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করেছে। একে অন্যকে অধিকার দেয়নি। জুলুম করেছে। যার দরুণ কোথাও দ্বন্দ্ব হয়েছে, কোথাও সৃষ্টি হয়েছে হতাশার, অনেকে চুপিসারে মুখ বুঝে সয়ে যাচ্ছে অন্য শ্রেণির অত্যাচার। কখনো হয়েছে আন্দোলন। আর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাতৃজাতি নারী সমাজ। কখনো তারা হয়েছে জুলুমের শিকার ও প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।

বিশ্ব মানবতার কাণ্ডারী রহমাতুল লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন শান্তি ও সাম্যের বাণী। নারী-পুরুষের শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ জীবনযাপনের জন্যে তিনি দিয়ে গেছেন একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতিমালা ও বিধি-বিধান, যার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে কুরআন কারীম, হাদীস শরীফ ও পবিত্র সীরাতে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁর পবিত্র কালামে মাজীদের বহু আয়াতে নারীদের কথা ইরশাদ করেছেন। কুরআন কারীমের একটি পুরো সূরাই রয়েছে সূরাতুন নিসা-নারী নামে। সূরাতুন নিসা ছাড়া আরও বিভিন্ন সূরায় নারী-বিষয়ক নীতিমালা ও উপদেশ-সংবলিত আয়াত রয়েছে। মহান রাব্বুল আলামীনের অমীয় নির্দেশ ও উপদেশগুলোর শুধু একটি বাক্যের দিকে লক্ষ্য করলেই যে কোনো বিবেকবান মানুষ বুঝতে পারবে- তিনি তাঁর বান্দী ও বান্দাগণের মধ্যে কীভাবে ভারসাম্যপূর্ণ ও ইনসাফভিত্তিক জীবনাচারের বিধান দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-

وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِيْ عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوْفِ.

আর স্ত্রীদেরও ন্যায়সঙ্গত অধিকার রয়েছে, যেমন তাদের প্রতি (স্বামীদের) অধিকার রয়েছে। -সূরা বাকারা (২) : ২২৮

অধিকার ও দায়িত্ব নেয়া ও দেয়ার ভারসাম্য প্রকাশের জন্যে এক কথায় এর চেয়ে সুন্দর কোনো বাক্য দুনিয়ার কেউ প্রকাশ করতে পারেনি।

মোটকথা, নারীসমাজকে সকলপ্রকারের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি এবং ভোগ-বিলাসের পণ্য হওয়ার পথ থেকে ফিরিয়ে আনার যুগান্তকারী পথ দেখিয়েছে একমাত্র ইসলাম। ইসলামের পথই নারী-পুরুষের মুক্তির পথ। ইনসানিয়্যাত তথা মানবতার মুক্তি ও টিকে থাকার পথ।

সে নারী সমাজের জন্যেই মাসিক আলকাউসারের এ ছোট্ট নিবেদন। আশা করি আমাদের কন্যা-জায়া-জননীগণ এর থেকে তাঁদের জীবনের দিশা পাবেন। আলকাউসার নারী পত্রিকার সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সম্পাদনায় রয়েছেন, মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আব্দুল জলীল। তার সহযোগিতায় রয়েছেন, মাওলানা মুহাম্মাদ ফজলুল বারী, মুহাম্মাদ খায়রুল বাশারসহ আরও অনেকে। মুরব্বীদের তত্ত¡াবধানে নিরলস প্রচেষ্টায় তৈরি হয়েছে এই সংখ্যা। আল্লাহ তাআলা মূল পত্রিকার মতো এ উদ্যোগকেও কবুল ও মাকবুল করুন- আমীন।

-আবুল হাসান মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ

২৯ জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩ হি.

২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ঈ.

 

 

advertisement