আম্মার তরবিয়তপদ্ধতি
যেভাবে অনুভব করেছি তাঁকে
আম্মার তরবিয়ত-প্রদান ও তরবিয়ত-পদ্ধতি অসাধারণ ছিল—এ কথা বলার ভেতর দিয়ে মূলত নিজেকেও ভালো বলা হয়ে যায় কি না, এ নিয়ে ভেতরে কিছুটা অস্বস্তি কাজ করছে। তাই শুরুতেই বলে রাখা ভালো—আম্মা আমাকে যেভাবে আদব-কায়দা আমল ও জীবনশিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন, এর সবটুকু আমি গ্রহণ করতে পারিনি। আমার জন্য এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তালীমের সবটুকু নিতে না পারলেও খুব কাছে থেকে তাঁকে ও তাঁর প্রচেষ্টাকে গভীরভাবে অবলোকন করার সুযোগটা পেয়েছি। এ লেখায় মূলত আমি সেটুকুই বলতে চাচ্ছি।
পৃথিবীর সব সন্তানই বোধ করি দাবি করবে—আমি খুব মা পাগল মানুষ ছিলাম। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি এটা। মায়ের প্রতি ভালবাসাকে কোনো কিছু দিয়েই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। মায়ের অনুপস্থিতি, তাঁর বিয়োগ-বেদনা আমাদের হৃদয়ে যে হাহাকার তৈরি করে, পৃথিবীর সকল সন্তানের ক্ষেত্রেই বোধ করি তা সমানভাবে সত্য, আমার ক্ষেত্রেও। ফলে, সন্তান হিসেবে আমি আমার আম্মাকে শুধু অবলোকনই করিনি, অনুভবও করেছি দীর্ঘ সময় ধরে।
সেই অনুভব থেকে বুঝেছি, তরবিয়তের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, আগে নিজে সে শিক্ষা ধারণ করা, হৃদয়ে, চিন্তায়, কর্মে ও আচরণে। আম্মার বিষয়টিও এমন ছিল। তিনি গভীরভাবে বিশ্বাসী মানুষ ছিলেন। সেই বিশ্বাস তার জীবনের লক্ষ ও গতিপথ নির্মাণ করে দিয়েছে এবং অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে ও সাড়ম্বরে সে পথ অতিক্রমের কাজটি তিনি করে গেছেন জীবনভর। এই বিশ্বাস তাঁর ভেতরে পুরো উম্মতের প্রতি গভীর মমতাও তৈরি করেছিল, বিশেষত সন্তানদের প্রতি। আম্মা আজীবন আমাদের থেকে বৈষয়িক কোনো কিছুই কামনা করেননি। তাঁর চাওয়া ছিল একটাই—আমরা যেন আল্লাহর পথে নিজেদেরকে উৎসর্গ করে দিই। ‘আমার সন্তান যেন উৎসর্গিত হয় আল্লাহর পথে’—এটি খুবই আবেগদীপ্ত ও ঝলমলে সোনালি একটি বাক্য। পিতা বা মাতা হিসেবে এমন কথা বলতে পেরে আমরা বিমল আনন্দ ও আবেগ অনুভব করি; কিন্তু একে বাস্তবে রূপ দান করা এবং এ রূপ দান করতে গিয়ে সত্যিকারের একটি জীবনযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া অত্যন্ত কঠিন কাজ। আম্মা এই কঠিন যুদ্ধটিই করে গেছেন জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত।
কেউ যখন একটি আদর্শ ও শিক্ষাকে এভাবে নিজের রক্তে মাংসে ও অস্থিমজ্জায় গ্রহণ করবে তখন সন্তানকে তরবিয়ত করার বিষয়টি তাকে আর ঘোষণা দিয়ে আলাদা ইচ্ছার মাধ্যমে শুরু করতে হয় না; এ বরং তার জীবনে অনিবার্য হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশিত হয়। এই তরবিয়তকালে যে মনোযোগ ও নিষ্ঠা, উদ্বেগ ও মমতা, তড়প ও ব্যাকুলতা তার চোখেমুখে ও সমগ্র সত্তায় যেরকম গভীর রং নিয়ে প্রকাশিত হয়, এর মধ্যে আল্লাহপ্রদত্ত যে রূহানিয়াত ও নুসরত থাকে, এটা সন্তানকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে। এজন্য কাউকে কোনো বিষয়ে নসীহত করার আগে নিজে সে নসীহতের উপর আমল করা, শুধু আমল নয় হৃদয়াবেগ দিয়ে জীবনে তা ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে মুমিনগণ, তোমরা যা কর না, কেন তা বলো? এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে—এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তোমরা যা কর না, কেন তবে কর বলে দাবি কর। ব্যাখ্যা হিসেবে এ কথা অবশ্যই শুদ্ধ। ফলে, কোনো আমল নিজে না করেও অন্যকে এর পথে আহŸান করার বৈধতা সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু এ কথা তো মিথ্যে নয়, আমি যখন নিজে কোনো নসীহত ধারণ করব না, তখন অন্যকে বলা বৈধ হলেও তা অত্যন্ত কমজোর ও কম প্রভাব সৃষ্টিকারী হয়।
মায়ের সবচেয়ে বড় যে তরবিয়তটি লাভ করেছি, তা হল জীবনের একটি মহান লক্ষ্য থাকতে হয়। এটা তাকে মুখে বলে শেখাতে হয়নি, সেই যে বলেছি, নিজের জীবনে ধারণ করলে তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনাতেই প্রকাশিত হয়। এই ব্যাপারটা একটু খুলে বলি।
ছোটবেলায় একটু সমঝদার হওয়ার পরই, আমার বয়স যখন পাঁচ কি ছয়, আমাদের পরিবারকে প্রচণ্ড অনটনের মুখে পড়তে দেখেছি। এ অনটনের ছিল শত মুখ, শত নখদন্ত। অনটনের কথাটি কারো কাছে প্রকাশ করা উচিত নয়, কিন্তু একটি বিষয় বোঝাতে গিয়ে খানিকটা বোধ করি বলতেই হচ্ছে। আমার মনে আছে, আমি খুব ছোট তখন। ঘরে শুধু চাল আছে। তরকারি রান্নার মতো কিছু নেই। কিছু যে আসবে সেই ব্যবস্থাও নেই। কীভাবে যেন বিষয়টা আমি বুঝতে পারলাম। আমার ক্ষুদ্র প্রাণটি সেদিন একটু বেশিই আহত হয়েছিল। কাউকে কিছু না জানিয়ে একটা ঝুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম শাকটাক কিছু পাওয়া যায় কি না ভেবে।
শাক আনতে পেরেছিলাম কি না ঠিক মনে নেই; কিন্তু বেরিয়ে যে পড়েছিলাম, সেটুকু স্পষ্ট মনে আছে, ছবিটাও। অনটনের অসংখ্য করুণ চিত্র আমার মনে পড়ে। আমরা সাত ভাই এক বোন।আমি মা বাবার পঞ্চম সন্তান। যে সময়ের কথা বলছি, তখন আমার বড় আরো চারজন পড়ালেখা করছেন। এতো বড় একটা পরিবারের সবটুকু আম্মা একাই পিঠে বহন করেছেন। সবগুলো সন্তানকে তিনি মাদরাসায় দিয়েছেন। পড়শি ও আত্মীয়গণ আম্মাকে সবসময় বুঝিয়েছেন, আপনার এতগুলো ছেলে, এক-দুজনকে অন্তত স্কুলে দিন।খুব সুস্পষ্টভাবে কেউ কেউ এমন কথাও বলেছেন—একটা সময় এমন আসবে, তোমরা ভাত পাবে না।
কিন্তু আম্মা ছিলেন অনড়। হৃদয়ে ছিল গভীর বিশ্বাস, বুকে ছিল অসীম সাহস। তাঁর কথা ছিল—মানুষজন স্কুলে পড়–ক, কিন্তু আমার সবগুলো সন্তান ইসলামের খেদমত করবে। হাফেজ আলেম হবে। জীবনে আর কিছু চাই না। তিনি মুরগি পালন করে ডিম বিক্রি করেছেন, বাড়ির আঙিনায় একটু-আধটু সবজি চাষ করে সেই সবজি বিক্রি করেছেন।
অনেকদিন এমন হয়েছে, আমি মাদরাসা থেকে এসে টাকা চেয়েছি, আম্মা চাল, সবজি, ডিম বা মুরগি দিয়ে আমাকে বাজারে পাঠিয়েছেন। একদিনের ঘটনা বিশেষভাবে মনে পড়ছে। আমি মাদরাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। মাদরাসা থেকে পালিয়ে এসে কোনো দিন নিস্তার পাইনি। আব্বাকে সাথে দিয়ে ফের পাঠিয়েছেন। একটা গা মাজার সাবান কিনে দিয়েছেন আর কিছু একটা বিক্রি করে ৭০ বা ৮০ টাকার মতো সাথে দিয়েছেন। বাসে উঠার সময় পকেট থেকে টাকাটা কে যেন নিয়ে গেল। আমি ফিরে গেলাম। ঘটনা শোনার পর আম্মার চেহারায় যে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছিল, সেই দৃশ্য আমি কোনো দিন ভুলব না। দুচোখ বেয়ে ঝরঝর করে পানি নামল। টাকা হারানোর শোকে নয়, আমার যাওয়াটা যে আটকে গেল, সেই দুঃখে। আমি কেন সতর্ক থাকি না, কেন শুধু না যাওয়ার সুযোগে থাকি, সেই মনোবেদনা থেকে সেদিন আমাকে কিছু প্রহারও করেছিলেন।
আম্মা কখনোই ভালো কোনো কাপড় পরতেন না; নিজে ভালোটা খেতেন না। তাঁর লক্ষ্য ছিল একটাই—কীভাবে সামলে উঠা যায়, কীভাবে সেই অমোঘ লক্ষ্যপানে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। এর জন্য তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং সীমাহীন এক দারিদ্র্যের সাথে নিরন্তর লড়াই করে শরীরের সমস্ত হাড় ক্ষয় করে ফেলেছেন।
এই যে পৃথিবীর জীবন ও সচ্ছলতাকে উপেক্ষা করে একটিমাত্র জীবনলক্ষ্যের দিকে পর্বতসম অটল থাকা, আমি তাঁর সুযোগ্য সন্তান হয়ে উঠতে পারিনি সত্য, কিন্তু তাঁর এই সংগ্রাম ও বিশ্বাস আমার ভেতরে সুস্পষ্ট একটি জীবনবোধ ও জীবনদর্শন তৈরি করেছে।একজন মায়ের দিক থেকে সন্তানের জন্য এর চেয়ে বড় তরবিয়ত আর কী!
এটা আমার জন্য খুবই সমস্যা যে, আমি বুঝতে পারছি না, ঠিক কোত্থেকে শুরু করব। আম্মা তাঁর পুরো জীবন দিয়ে আমাদের সাথে এত গভীরভাবে যুক্ত হয়েছেন এবং আমাদের একান্ত অনুভবের ভেতরে এমন নিবিড়তর মা হয়ে উঠেছেন, তাঁর কথা বলতে গেলে সবসময়ই আমি এমন অসহায় বোধ করি। সে অনুভব থেকে খুবই অদ্ভুত একটা উপলব্ধির কথা বলি।
আমি যখন আম্মা থেকে অনেক দূরে মাদরাসায় থাকতাম, তখন ঘটত এটা। আমার সবসময়ই রাতে দেরিতে ঘুমানোর অভ্যাস। এই খারাপ অভ্যাসটি এখনো আছে। আল্লাহ আমাকে এ থেকে মুক্ত করুন। দেখা যেত সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আমি বিছানায় মাথা রেখে শুয়ে আছি। ঘুম আসি আসি, পৃথিবীর সমস্ত শব্দ একটু করে স্তিমিত হয়ে আসছে। এই সময়টায় বোধ করি মানুষের অবচেতন মন ধীরে জেগে উঠে। এই আধো ঘুম আধো জাগরণে মাঝে মাঝে আম্মার ডাক শুনতে পেতাম। আম্মা আমার নাম ধরে অদ্ভুত এক সুরে ডাকছেন। এই ব্যাপারটা বাড়িতেও ঘটত মাঝে মাঝে। আম্মার ইন্তেকালের পর থেকে এই ডাক আর শুনিনি কখনো। খুবই অদ্ভুত ডাক ছিল সেটি। এমন সুরের ডাক বাস্তব জীবনে কখনো ডেকেছেন বলে মনে পড়ে না। আম্মাকে দেখতে পেতাম না; কিন্তু শব্দটা আচমকা যেভাবে আসত, সে থেকে তার অবস্থানের একটা ধারণা পাওয়া যেত যেন। যেন সন্ধ্যা, পশ্চিমের আকাশে তখনো একটু আলোর ছটা লেগে আছে, যেন বাতাস বইছে, সে বাতাসের দিকে পিঠ দিয়ে আম্মা নিচু কোথাও দাঁড়িয়ে আছেন, মাথায় কাপড় দেয়া আর চেহারায় একটু করে হাসি মেশানো দুঃখের ছাপ। আমার নাম ধরে ডাকছেন। প্রথম হরফটা দ্রæত বলে মাঝের হরফটি একটু সময় ধরে রাখছেন। এই সময়টাতে তার স্বরের মধ্যে বিচিত্র আবেদন ফুটে উঠত। প্রবল মায়া, গভীর আফসোস, একটু হতাশা, একটু সতর্কবার্তা। যেন আমার সময়টা বয়ে যাচ্ছে, আর আমি কিছুই না করে অলস বসে আছি। আমার জীবনের ব্যর্থতা নিয়ে তাঁর সীমাহীন ভীতি। যেন আমাকে সজাগ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এভাবে মাঝের হরফটি পেরিয়ে তিনি শেষ হরফে উপনীত যখন হতেন, সেটা বাতাসে মিলিয়ে যেত। মাঝে মাঝে এত গভীরভাবে এই ডাক শুনতে পেতাম, আমার ঘোর কেটে গেলে আমি কেঁপে উঠতাম। এরপর অনেকক্ষণ আর ঘুম আসত না। আম্মাকে নিয়ে ভাবতাম, ভাবতাম নিজের জীবনপরিক্রমা নিয়ে। খুবই অদ্ভুত শোনাচ্ছে হয়তো; কিন্তু আমার জীবনে তা সত্য ছিল। আমি এর সম্ভাব্য একটা ব্যাখ্যাও খুঁজে পেয়েছি। আমার ধারণা এটা অবচেতন মনের কাজ। বোধ করি আরো অনেকেই আধো ঘুমে এমন করে কোনো কোনো শব্দ শুনতে পান।
কিন্তু আমি আম্মার ডাকটাই কেন শুনতে পেতাম? এর পেছনে আছে আমার দুঃসহ অনেক স্মৃতি। অন্যান্য ভাইদের মতো আমাকেও খুব ছোটবেলায় পড়ালেখার জন্য বাড়ি থেকে দূরে চলে যেতে হয়েছিল। সে সময়গুলোতে আমার নানাবিধ কষ্ট ছিল, কিন্তু আম্মাকে কাছে না পাওয়ার কষ্টের কাছে সকল কষ্ট ছিল তুচ্ছ ও নগণ্য। মন খারাপ করে ভাবতাম পৃথিবীটা এমন অদ্ভুত কেন? অনিচ্ছায় কী এক নির্দয় জীবনের ভেতর পড়ে গেছি। আম্মাকে ছাড়া আমার কোনো কিছুই ভালো লাগত না।
কখনো এমন হয়েছে—দুহাত তুলে দুআ করে হাউমাউ করে কেঁদেছি, যেন তাঁর থেকে দূরে যেতে না হয়। আমার মনে আছে, হেফজখানায় পড়াকালীন সন্ধ্যার আজান হলে যখন মাদরাসায় ফিরে আসতাম, পশ্চিমের আকাশটা লাল হয়ে থাকত। সে সময়টায় আম্মার কথা মনে পড়ত বেশি। আমার সে আকাশ এখনো রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে। আমি পরবর্তী জীবনে কখনোই সে মন খারাপের ঘোর থেকে বেরোতে পারিনি।
মাদরাসার ছুটির সময়গুলোতে সারাজীবনে আমি অসংখ্য বার বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেছি। কিন্তু আমার এ প্রত্যাবর্তন ছিল মূলত আম্মার কাছেই। বড় হওয়ার পরও আম্মাকে কাছে পাওয়ার আনন্দে আমি শিশুর মতো উচ্ছলতা বোধ করতাম। সম্ভবত এ কারণেই আধো ঘুমে আমি কেবল তাকেই পেতাম। এখানে মূলত বলবার কথা যেটি—এই অবচেতনের ডাকটি আমি সাধারণভাবে শুনতে পেতাম না; শুনতাম একটি সতর্কবার্তারূপে, আফসোস, হতাশা ও প্রগাঢ় এক মমতার সুরের মধ্য দিয়ে। সুরের এই ধরনটি নির্ধারণ করে দিয়েছে, টের পাই, আম্মার সে আদর্শিক জীবনসংগ্রাম, লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার প্রত্যয় থেকে আমাদের প্রতি তার যে ব্যথাতুর অসহায় চাহনি এবং আমাদের কাছ থেকে একটি সুন্দর আমলী জিন্দেগী পাবার ব্যাকুলতা।
শুরুতে একবার বলেছি, আবারো বলি—ব্যক্তিগতভাবে আমি আম্মার চাওয়া মতো জীবনটি গড়ে তুলতে পারিনি—আল্লাহ আমাকে সে তাওফীক দিন—কিন্তু হৃদয়ের গভীর থেকে আকুল হয়ে তাকে কথা দিয়েছি, জীবনটি আমি সেভাবেই গড়ে তুলব, যেভাবে তিনি আজীবন চেয়ে এসেছেন। একজন তরবিয়তকারীর সত্যিকারের সাফল্য সম্ভবত এটিই—তরবিয়তগ্রহীতার ভেতরে সে প্রতিজ্ঞাটি সঞ্চার করে দেওয়া। এবং এটা তখনই সম্ভব, যখন তিনি নিজে সে জীবনটিকে ধারণ করবেন। ফলে, আমার কাছে এ এক অমোঘ সত্যের মতো মনে হয়—সন্তানকে আল্লাহর নিবেদিত মুমিনরূপে গড়ে তুলতে হলে প্রতিটি মা-বাবাকে আগে নিজেদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। সন্তান নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদাঙ্ক অনুসরণ করুক—এটা যদি চাওয়া হয়, মা-বাবা আগে তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারী হওয়া আবশ্যক।
এখন যখন মসজিদে মুসল্লীদেরকে বয়ান করতে যাই, ছাত্রদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে নসীহত করতে বসি, তখন ভেতরে ভেতরে খুবই কুণ্ঠিত হয়ে পড়ি। নিজেরই তো আমল দুরস্ত নয়, আমার কথায় মানুষের কী ফায়দা হবে? মনে মনে তওবা করি—আল্লাহ, কথা দিলাম, এখন থেকে ভালো হয়ে যাব। আমার বয়ান দ্বারা আগে আমাকে ইসলাহ হওয়ার তাওফীক দান করুন।