জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩   ||   ফেব্রুয়ারি -এপ্রিল ২০২২

পুষ্টিচিন্তা
খাদ্যগ্রহণের সময় যা মাথায় রাখা জরুরি

ডা. মাওলানা মাসীহুল্লাহ

আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন প্রাণ। প্রাণের বাহন হচ্ছে শরীর। এই শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা  দিয়েছেন খাদ্য। শরীরের মাঝে রয়েছে খাদ্য পরিপাকের জন্য স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এই পরিপাককৃত খাবার থেকে শরীর শক্তি উৎপাদন করে, ক্ষয় পূরণ করে, রোগ প্রতিরোধ করে, শরীরের মাঝে সঞ্চয় করে রাখে প্রয়োজনীয় উপাদান।

আল্লাহ তাআলা এই খাবারের মাঝে রেখেছেন বিচিত্র স্বাদ। আস্বাদনের জন্য দিয়েছেন জিহ্বা। সুমিষ্ট ঘ্রাণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা রং খাবারের প্রতি বাড়িয়েছে আকর্ষণ। মানুষ কেবল খায় না, দেখে চোখ জুড়ায়, ঘ্রাণ নেয়। এর সবকিছুই মহান আল্লাহ তাআলারই দান।

وَمَا بِكُمْ مِّنْ نِّعْمَۃٍ فَمِنَ اللهِ.

যত নিআমতই তোমরা ভোগ কর, সবই আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে। সূরা নাহল (১৬) : ৫৩

শরীর সুস্থ-সবল রাখার জন্য খাদ্য অপরিহার্য। শরীরের হক আদায় করতে গেলে খাবারের প্রসঙ্গ অনিবার্যভাবেই আসবে। আল্লাহ তাআলাও তাই খেতে ও পান করতে বলেছেন

كُلُوْا وَ اشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا.

খাও, পান কর, কিন্তু অপচয় কর না। সূরা আরাফ (৭) : ৩১

খাবার আল্লাহ তাআলার নিদর্শনসমূহের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ এক নিদর্শন। চিন্তা করা দরকার, খাবার কীভাবে আমাদের কাছে আসে, কীভাবে আমাদের শরীরের নানা প্রয়োজন পূরণ করে।

কুরআনে কারীমেও তাই অনিবার্যভাবে খাবারের প্রসঙ্গ এসেছে। খাদ্য ও পুষ্টি আল্লাহ তাআলার এমন নিদর্শন, যা নিয়ে ভাবনা আমাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দেবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন

فَلْیَنْظُرِ الْاِنْسَانُ  اِلٰی طَعَامِهٖۤ  ﴿ۙ۲۴﴾  اَنَّا صَبَبْنَا  الْمَآءَ صَبًّا  ﴿ۙ۲۵﴾  ثُمَّ شَقَقْنَا الْاَرْضَ شَقًّا   ﴿ۙ۲۶﴾  فَاَنْۢبَتْنَا فِیْهَا حَبًّا   ﴿ۙ۲۷﴾  وَّ عِنَبًا وَّ قَضْبًا   ﴿ۙ۲۸﴾  وَّ زَیْتُوْنًا وَّ نَخْلًا   ﴿ۙ۲۹﴾  وَّ حَدَآئِقَ غُلْبًا  ﴿ۙ۳۰﴾  وَّ فَاکِهَۃً  وَّ اَبًّا  ﴿ۙ۳۱﴾  مَّتَاعًا لَّكُمْ وَ لِاَنْعَامِكُمْ  ﴿ؕ۳۲

অতঃপর মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক! আমি উপর থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। তারপর ভূমিকে বিস্ময়করভাবে বিদীর্ণ করেছি। তারপর আমি তাতে উৎপন্ন করেছি শস্য, আঙ্গুর, শাকসবজি, যায়তুন, খেজুর, নিবিড়-ঘন বাগান এবং ফলমূল ও ঘাসপাতা। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের গবাদি পশুর জন্য। সূরা আবাসা (৭০) : ২৪-৩২

লক্ষ করার বিষয়, খাদ্যের প্রসঙ্গে একদম শুরুতেই এসেছে শস্যের কথা। চাল, গম, যব মানুষের প্রধান খাদ্য, যা কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবারের প্রধান উৎস। আর মানুষের জন্য আদর্শ খাদ্য তালিকায় যার পরিমাণ ৫০-৬০%।

এ আয়াতগুলোতে অনিবার্যভাবে এসেছে ফ্যাট বা চর্বির প্রসঙ্গ। যায়তুন ভোজ্যতেলের সবচেয়ে উত্তম উৎস। এসেছে বিভিন্ন রকম ফলের আলোচনা, সবজি ও আঁশযুক্ত খাবারের প্রসঙ্গ।

আপনি হয়তো আপনার জীবনে ২০০০০ বারের অধিক খাবার খেয়েছেন। প্রতিবারই আপনার শরীর আপনার আহারকৃত খাদ্য থেকে তার গঠন, শক্তি উৎপাদন, ক্ষয়পূরণ ও রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করেছে আপনার অজান্তেই। এতে আপনার কোনো সচেতন অংশগ্রহণ নেই। আপনার শরীর কতটা সফলভাবে এই কাজগুলো হ্যান্ডেল করবে এর বড় অংশ নির্ভর করছে আপনার খাদ্য নির্বাচনের উপর।

পুষ্টির ব্যাপারে আমরা যদিও সজাগ নই, অথচ তা আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর তা নির্ভর করে আমাদের খাদ্য নির্বাচনের উপর। প্রতিদিনই কয়েকবার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার চয়েস করি, আর তার রয়েছে আমাদের শরীরের উপর উপকারী বা অপকারী প্রভাব। হয়তো মাত্র এক দিনের খাদ্য নির্বাচনের প্রভাব শরীরের উপর খুবই সামান্য। কিন্তু এই খাবারগুলো যখন আমরা বারংবার কয়েক বছর ও দশক জুড়ে গ্রহণ করতে থাকি, তখন শরীরের উপর তার প্রভাব হয় অনেক বড়। আজ যদি আমরা খাদ্যাভ্যাস স্বাস্থ্যকর বানানোর চেষ্টা করি, তাহলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর বড় উপকারী প্রভাব সৃষ্টি করবে। আর যদি খাদ্যাভ্যাস নিয়ে মাথা না ঘামাই, জীবনের একপর্যায়ে তা আমাদের শরীরে সৃষ্টি করবে নানা রোগ।

কাজেই আমাদের নিজেদের জন্য আমাদের নির্বাচন করতে হবে সুষম খাদ্য। কেবল পেট ভরে খাওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং আহার হতে হবে পরিমিত, পুষ্টি-গুণসম্পন্ন।

সুষম খাবারকে ইংরেজিতে বলা হয়, ব্যালেন্স ডায়েট। ব্যালেন্স ডায়েট বলতে ঐ খাবারকে  বোঝায়, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের খাদ্য উপাদান ধারণ করে। একটা সুষম খাদ্যতালিকায় থাকতে হবে ছয় ধরনের খাবার। আবার সেই খাবারগুলোও হতে হবে যথাযথ পরিমাণে। সেই ছয় ধরনের খাবার হচ্ছে,

এক. কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা,

দুই. প্রোটিন বা আমিষ,

তিন. ফ্যাট বা চর্বি,

চার. ভিটামিনসমূহ,

পাঁচ. মিনারেলস বা খনিজ পদার্থ,

ছয়. পানি।

পুষ্টিজ্ঞান না থাকার কারণে অনেক সময় আমাদের খাদ্যতালিকায় প্রতিটি খাদ্য উপাদান যথাযথ পরিমাণে থাকে না। কোনো উপাদান আমরা গ্রহণ করি প্রয়োজনের অতিরিক্ত বা কোনোটা হয়ে পড়ে প্রয়োজনের তুলনায় অল্প। কোনো উপাদান পরিমাণে বেশি হওয়াও সমস্যা সৃষ্টি করে, যেমন সমস্যা সৃষ্টি হয় কোনো বিশেষ খাদ্য উপাদানের ঘাটতির কারণে।

আমরা ইদানীং যে কমন সমস্যায় ভুগছি তা হচ্ছে ওবেসিটি বা ওজনাধিক্য। ডায়াবেটিস, হার্টডিজিজ, স্ট্রোক, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, ইনফার্টিলিটি বা প্রজননে অক্ষমতা ওবেসিটির কারণে হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ওবেসিটি বা মেদ বা ওজনাধিক্যের কারণ কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা এবং কায়িক পরিশ্রম না করা।

শর্করা জাতীয় খাবারের উৎস হচ্ছে শস্যজাতীয় খাবার, চাল, গম, যব; সবজির মাঝে আলু, কচু, মিষ্টিজাতীয় খাবার, চিনি ইত্যাদি। বাঙালি হিসেবে আমাদের প্রধান খাদ্য ভাত। প্রতিদিন তিন বেলা ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ বা ডিনারের সময় কার্বোহাইড্রেট তো প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাচ্ছি। আবার দুই খাবার গ্রহণের মাঝামাঝি সময়েও প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আমরা নাস্তা হিসেবে যে খাবার গ্রহণ করছি, তাতেও থাকছে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবারের আধিক্য। যেখানে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় শতকরা ৫০-৬০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট থাকার কথা ছিল, সেখানে আমরা গ্রহণ করছি প্রায় শতকরা ৮০-৯০ ভাগ। আমাদের শরীরের শক্তি উৎপাদনের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, এর অতিরিক্ত যা গ্রহণ করছি তা চর্বি হয়ে আমাদের শরীরে জমে যাচ্ছে। ফলে একজন মানুষের আদর্শ শারীরিক ওজন যতটুকু হওয়া উচিত, তার তুলনায় অতিরিক্ত যে ওজন বাড়ছে তার পুরোটাই এই অপ্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট থেকে সৃষ্ট জমানো চর্বি। এই জমানো চর্বি থেকে নিঃসরণ হয় বিভিন্ন ক্ষতিকর ক্যামিকেল পদার্থের, যা রক্তনালিতে চর্বি জমে হার্টএটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির কারণ হচ্ছে।

আমাদের খাদ্যতালিকার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ অবশ্যই প্রোটিন বা আমিষ থেকে আসতে হবে। একটা আদর্শ খাদ্যতালিকার মোট কিলোক্যালরির শতকরা ১০-২০ ভাগ আসা উচিত প্রোটিন থেকে। এই প্রোটিন শরীরের গঠন, ক্ষয়পূরণ এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য জরুরি। প্রোটিনের মাঝে যেমন প্রাণীজ প্রোটিন রয়েছে, তেমনই রয়েছে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। প্রাণীজ প্রোটিনের প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ, গোশত, দুধ ও ডিম। আর উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের বড় উৎস ডাল, বাদাম এবং বিভিন্ন ধরনের বিচি।

একইভাবে খাদ্যতালিকায় চর্বিজাতীয় খাবারও থাকা চাই। চর্বির পরিমাণ হওয়া চাই মোট কিলোক্যালরির শতকরা ৩০ ভাগ। চর্বির মধ্যে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কঠিন (সম্পৃক্ত) চর্বির চেয়ে তরল চর্বি বেশি স্বাস্থ্যকর। ভোজ্যতেলের মধ্যে উপকারী হচ্ছে যায়তুন, সূর্যমুখী তেল। ডালডা, ঘি, প্রাণীজ চর্বি, সয়াবিন, সরিষা ইত্যাদি ভোজ্যতেলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

আমাদের জানতে হবে, আমাদের প্রতিদিন কী পরিমাণ খাবার গ্রহণ করা দরকার। জানা উচিত কোন ধরনের খাবার কী পরিমাণ খেতে হবে। একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা নির্ভর করে তার শরীরের উচ্চতা ও ওজনের ওপর। আমাদের প্রত্যেকের শরীরের ওজন হতে হবে আমাদের উচ্চতা অনুযায়ী। একজন মানুষের আদর্শ ওজন কতটুকু হওয়া উচিত তা জানা যায় আদর্শ ওজন-উচ্চতা চার্ট থেকে। সহজভাবে মনে রাখার জন্য বলা যায়, একজন মানুষের উচ্চতা যত ইঞ্চি, তার ওজন হওয়া উচিত তত কেজি। কিংবা একজন মানুষের উচ্চতা যত সেন্টিমিটার, তা থেকে ১০০ বাদ দিলে হবে কিলোগ্রামে তার আদর্শ ওজন। ধরা যাক, একজন পুরুষের উচ্চতা ১৭২ সেন্টিমিটার, তার আদর্শ ওজন হওয়া উচিত ৭২ কেজি। নারীদের ক্ষেত্রে তা আরও ৫ কেজি কম। অর্থাৎ নারীদের ক্ষেত্রে উচ্চতা (সেমি) থেকে ১০৫ বিয়োগ করতে হবে।

একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা নির্ভর করে তার কায়িক শ্রমের উপর। কেউ খুব বেশি কায়িক পরিশ্রম করেন। তাকে স্বাভাবিকভাবেই বেশি কিলোক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। মাঝারি পরিশ্রমীর জন্য মাঝামাঝি এবং বসে বসে কাজ করেন এমন মানুষের জন্য দৈনিক চাহিদা হবে আরও কম।

একজন মানুষের খুব খেয়াল রাখা চাই তার কোমরের চারপাশে মেদ জমছে কি না। ঠিক নাভি বরাবর মাটির সমান্তরালে স্বাভাবিক নিঃশ্বাস ফেলার পর কোমরের মাপ নিলে বোঝা যাবে তার পেটে অতিরিক্ত মেদ আছে কি না। একজন পুরুষের কোমরের মাপ ৯০ সেন্টিমিটার বা বেশি হলে এবং একজন মহিলার কোমরের মাপ ৮০ সেন্টিমিটার বা বেশি হলে বুঝতে হবে পেটে অতিরিক্ত মেদ জমেছে। পেটে অতিরিক্ত মেদ জমা ডায়াবেটিস, হার্টএটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

একজন মানুষ যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিলোক্যালরি গ্রহণ করে, তাহলে এই অতিরিক্ত কিলোক্যালরি তার শরীরে জমা হতে শুরু করবে। তার শরীর স্থল হয়ে পড়বে। এই স্থলতার কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগের আশঙ্কা বাড়বে। ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, রক্তে চর্বির অস্বাভাবিক মাত্রা, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, আর্থাইটিস, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়বে।

বর্তমানে আমাদের দেশে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এমনকি অল্প বয়সে ডায়াবেটিসের সংখ্যাও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ শারীরিক স্থলতা ও কায়িক শ্রমের অভাব। আমাদের দেশে নারীদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস (জিডিএম)-এর  হারও বাড়ছে অতিরিক্ত ওজন ও কায়িক শ্রমের ঘাটতির কারণে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মা ও বাচ্চার শরীরে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে।

ডায়াবেটিস, হাইপ্রেসার, রক্তে অতিরিক্ত চর্বির মাত্রা ইত্যাদি প্রতিরোধযোগ্য। এই প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় অস্ত্র পরিমিত খাবার গ্রহণ। পরিমিত খাবার গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে সহজেই এসব রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ক্যালরির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ। একজন মানুষের দৈনিক খাবার গ্রহণের সময়ও নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। সাধারণত প্রতিদিনের খাবার গ্রহণকে গবধষং(ভারী খাবার)  ও ঝহধপশং (হালকা খাবার)-এ ভাগ করা হয়। ভারী খাবার সাধারণত তিনবার গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার। সাধারণত হালকা খাবারও তিনবার গ্রহণ করা হয়। সকাল ও দুপুরের খাবারের মাঝামাঝি সকাল দশটা-এগারোটার দিকে, দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝামাঝি বিকেলের দিকে এবং বেডটাইম বা শোয়ার সময় হালকা খাবার।

যাদের ওজন আদর্শ মাত্রার চেয়ে বেশি, তাদের জন্য সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার এবং রাতের খাবার ছাড়া আর কোনো অতিরিক্ত নাস্তা গ্রহণ উচিত নয়। ফ্রী সুগার বা চিনির পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে ফেলা উচিত। বিভিন্ন ধরনের পানীয়, বেকারির খাবার ইত্যাদি একেবারেই বাদ দেয়া উচিত। দুই ভারী-খাবার গ্রহণের মাঝে গ্যাপ যত বাড়বে, ওজন কমানো তত বেশি সহজ হবে। যারা তেমন কায়িক পরিশ্রম করেন না, তারা যদি অপ্রয়োজনে ঘন ঘন নাস্তা গ্রহণ করেন, তাহলে ওজন বাড়ানো ঠেকিয়ে রাখা কিছুতেই সম্ভব হবে না।

খাবারে শাক-সবজির পরিমাণ অনেক বাড়ানো দরকার। ফাইভার বা আঁশযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিভিন্ন ধরনের টকজাতীয় দেশি ফল শরীরে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনের সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এছাড়া একজন মানুষের প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা চাই। পানি সুষম খাবারের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

মোটকথা, খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে একদিকে আমাদের দেখতে হবে, যেন দৈনিক চাহিদার চেয়ে কম বা বেশি গ্রহণ করা না হয়। সাথে সাথে এটিও খেয়াল রাখতে হবে, যেন খাবারে সব ধরনের খাদ্য-উপাদান যথাযথ পরিমাণে থাকে।

 

লেখক : টিউটর ও ফ্যাকাল্টি মেম্বার, ডিসট্যান্স লার্নিং প্রোগ্রাম (বারডেম), বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি। চীফ ডায়াবেটোলজিস্ট, ডা. মাসিহ্স ডায়াবেটিস কেয়ার, হাটহাজারী।

 

 

advertisement