জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩   ||   ফেব্রুয়ারি -এপ্রিল ২০২২

তত্ত্বাবধায়কের কথা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد :

উম্মতের মনীষীগণ প্রত্যেক শ্রেণির নারীর প্রতি যত্নবান ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সীরাতে এবং সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনের জীবনীতে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। সালাফের পরবর্তী মনীষীদের জীবনীতেও রয়েছে অনেক উদাহরণ। পূর্বের উম্মতের নবীগণ এবং তাঁদের নেককার উম্মতের মাঝেও এর অনেক দৃষ্টান্ত ছিল। ইবরাহীম আ., মূসা আ., যাকারিয়া আ., ইয়াহইয়া আ. এবং ঈসা আ.-এর বিভিন্ন ঘটনা কুরআন কারীমে বর্ণিত হয়েছে। মূসা আ.-এর এ কথাটি কত আবেদনপূর্ণ-

امْكُثُوْۤا  اِنِّيْۤ  اٰنَسْتُ نَارًا لَّعَلِّيْۤ  اٰتِيْكُمْ مِّنْهَا بِخَبَرٍ اَوْ جَذْوَةٍ مِّنَ النَّارِ لَعَلَّكُمْ تَصْطَلُوْنَ.

তোমরা অপেক্ষা কর। আমি এক আগুন দেখেছি, হয়তো আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে আনতে পারব কোনও সংবাদ অথবা আগুনের একটা জ্বলন্ত কাঠ, যাতে তোমরা উত্তাপ গ্রহণ করতে পার।

-সূরা কাসাস (২৮) : ২৯

থাক, এ ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। এখন শুধু এটুকু বলতে চাচ্ছি, বর্তমান সমাজজীবনের অন্যান্য অনেক বিষয়ে যেমন ইসলামের শিক্ষা ও নববী আদর্শের ব্যাপারে উদাসীন তেমনই নারীদের বিষয়েও উদাসীন। প্রয়োজন এ বিষয়ে শরীয়তের বিধানসমূহের বাস্তব অনুশীলন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাত ও সুন্নাহর পূর্ণ অনুসরণ।

পুরুষের প্রত্যেক শ্রেণি যদি নারীদের বিষয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে এবং সালাফের মতো তাদের প্রতি যত্নবান হয়, তাহলেই এ সমাজ হবে একটি আদর্শ সমাজ। নারীরও জানা উচিত কেমন ছিলেন সালাফের নারীগণ। তাদের অনুধাবন করা উচিত আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল তাকে কতভাবে সম্মানিত করেছেন। শরীয়তের বিধানে তার প্রতি কত সূক্ষ্ম² এবং দয়ার দৃষ্টি রেখেছেন। এর জন্য যেমন তাদের জানা দরকার কুরআন-সুন্নাহয় তাদেরকে কী বলা হয়েছে এবং তাদের বিষয়ে কী বলা হয়েছে, তেমনই জানা দরকার সালাফে সালিহীনের প্রত্যেক শ্রেণির নারীদের ঈমান জাগানিয়া সীরাত ও ইতিহাস।

সালাফের মনীষীগণ মেয়েদের প্রতি কেমন যত্নবান ছিলেন তার কিঞ্চিত আঁচ করা যাবে শুধু এ বিষয় থেকে যে, তাদের পূর্ণ আলেম বানানোর প্রতিও সালাফের বিশেষ দৃষ্টি ছিল। সম্প্রতি অনেক বড় কলেবরের একটি কিতাব الوفاء بأسماء النساء নামে ছেপে এসেছে। ৪৩ খণ্ডের এ কিতাবটি সংকলন করেছেন ড. আকরাম নদভী। প্রতি খণ্ডে আনুমানিক ছয়/সাত শ পৃষ্ঠা। এই কিতাবে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ঐ নারীগণের জীবনী, যাঁরা হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে, হাদীসের কিতাবসমূহ বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন। আফসোস! এ যুগের পুরুষের অনেকেই যেমন সালাফের পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, নারীদের অনেকেও সালাফের নারীদের আদর্শ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। পুরুষেরা যখন আয়-রোজগারের জন্য ঘর থেকে বের হতেন সালাফের নারীগণ বলতেন, আমরা অভাব-অনটনের কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত কিন্তু জাহান্নামের আগুনে জ¦লার ধৈর্য আমাদের নেই। তাই রোজগারের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুন। হারাম কোনো কিছু নিয়ে ঘরে আসবেন না।

এখন কোনো কোনো নারীর কথা শোনা যায়, আমার এই এই দরকার। তুমি কীভাবে ব্যবস্থা করবে আমি জানি না। আমাকে তা দিতেই হবে।

মনে রাখতে হবে, সফলতা এবং মুক্তি সালাফের পথে। তাই পুরুষদেরও হতে হবে সালাফের নমুনা। নারীদেরও হতে হবে সালাফের নমুনা।

আশা করি, মাসিক আলকাউসারের এ নতুন আয়োজন নারীদের বিষয় এবং নারীদের জন্য সালাফের আদর্শ জানতে এবং অনুধাবন করতে সহায়ক ভমিকা রাখবে। আল্লাহ তাআলা তাওফীকদাতা।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

২৬ জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩ হিজরী

৩০-১-২০২২ ঈসাব্দ

 

 

advertisement