শাবান-শাওয়াল ১৪৪৪   ||   মার্চ-মে ২০২৩

কুরআন কারীমের কিছু আয়াত ও শিক্ষা

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونؤمن به ونتوكل عليه،ونعوذبالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا،من يهده الله فلا مضل له،ومن يضلل فلا هادي له.

আল্লাহর মেহেরবানি, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সালাতুত তারাবীর মধ্যে তাঁর কালাম তেলাওয়াত করা এবং শোনার তাওফীক নসীব করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ! এই রাতটি রমযানের রাত। আবার বেজোড় রাত হওয়ার কারণে লাইলাতুল কদর হওয়ারও সম্ভাবনা। সেজন্য আমরা দুআ ও ইস্তেগফারের মধ্যে কাটাব। যেন এই রাতের বরকত নসীব হয়, ইনশাআল্লাহ।

আজ ২৬তম পারা তেলাওয়াত করা হয়েছে। এ পারাতে অল্প কয়েকটি সূরা আছে। একটি হলো, সূরাতুল আহকাফ। আরেকটি সূরাতুল হুজুরাত। সূরাতুল আহ্কাফের দুয়েকটি আয়াত আমরা মোযাকারা করে নেব। ইনশাআল্লাহ! আর সূরাতুল হুজুরাতে ইসলামী আদাবের একসাথে দীর্ঘ আলোচনা আছে।

যদিও বিক্ষিপ্তভাবে পুরো কুরআন মাজীদেই আদাবের আলোচনা আছে, কিন্তু একসাথে লম্বা আলোচনা সূরা হুজুরাতেই আছে। আজকে যোহরের পর মাওলানা যাকারিয়া আবদুল্লাহ ইসলামী আদবের যে বিস্তৃত এবং গভীর অর্থ বলেছেন, সে অর্থে তো কুরআনের সকল হেদায়েত এবং সকল তালীমই আদবের তাবে ও অধীন। কিন্তু আদবের সাধারণ এবং প্রসিদ্ধ যে পরিভাষা রয়েছে, সেই আদবও কুরআনের বিভিন্ন সূরায় বিক্ষিপ্তভাবে আছে। সূরাতুল হুজুরাতে একসাথে অনেকগুলো আদবের আলোচনা এসেছে।

আমি সূরাতুল আহ্কাফের দুটো আয়াত সম্পর্কে কিছু কথা বলব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ কবুল করার মালিক।

সূরাতুল আহ্কাফের মধ্যে আল্লাহ তাআলা দুই ধরনের সন্তানের কথা বলেছেন।

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا.

ইনসানকে আমি বিশেষ নির্দেশ দিয়েছি, সে যেন তার মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করে।

حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا.

তার মা তাকে অনেক কষ্টে ধারণ করেছেন এবং অনেক কষ্টে প্রসব করেছেন।

وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا.

তাকে গর্ভে ধারণ করা এবং তার দুধ ছাড়ানো এই দুটোর সময় হল, ৩০ মাস।

কমপক্ষে ছয় মাস তাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, তারপর দু বছর তাকে বুকের দুধ খাইয়েছেন। মহব্বত ও ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। যখন তার কোনো ধরনের কোনো অনুভূতি ছিল না, তখন তাকে লালনপালন করেছেন।

সব মানুষকেই তার মা এমন কষ্ট করে ধারণ করেছেন এবং জন্মের পর তার তরবিয়ত করেছেন। তাই আল্লাহ্ সবাইকে মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। পিতার বিষয়টা এখানে উহ্য। প্রথমে আল্লাহ্ বলেছেন, ইনসানকে আমি মা-বাবা উভয়ের সাথে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ করেছি। তারপরে আলোচনা এসেছে শুধু মায়ের।

حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا.

পিতার আলোচনা এখানে সরাসরি না এলেও পরোক্ষভাবে আছে। এই ৩০ মাসে সন্তানের জন্য মায়ের কষ্ট বেশি হলেও বাবারও কিন্তু অনেক ভূমিকা রয়েছে। সকল মানুষকে তার বাবা-মা কষ্ট করে লালনপালন করেন। গর্ভধারণ করা ছাড়াও মা অন্যান্য আরো কষ্ট করেন। হাঁ, সাথে বাবাকেও অনেক কষ্ট করতে হয়। 

আল্লাহ্ সকল মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন, তুমি তোমার মা-বাবার সাথে ভালো ব্যবহার কর। কিন্তু আল্লাহর এ নির্দেশ পালন করার ক্ষেত্রে মানুষ দু ভাগে বিভক্ত। এক শ্রেণির অবস্থা হলো, যখন সে বড় হয়েছে, মজবুত হয়েছে, আল্লাহ তাকে হায়াত দান করেছেন, ৪০ বছর হায়াতে উপনীত হয়েছে, তখন সে আল্লাহর দরবারে এ দুআ করে 

رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ.

হে আমার রব! আপনি আমাকে তাওফীক দান করুন, যেন আপনার নিআমতের শোকর আদায় করতে পারি। আমার প্রতি আপনার যে নিআমত এবং মা-বাবার প্রতি আপনার যে নিআমত, এ সব নিয়ামতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি, আপনি আমাকে সেই তাওফীক দান করুন!

মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি, তাঁদের ওপর যেসব নিআমত রয়েছে, পরোক্ষভাবে সেগুলো আমার উপরও আল্লাহর নিআমত। আমি সরাসরি যে নিআমতগুলো ভোগ করি, সেগুলোর শোকর আদায় করা যেমন জরুরি, আমার পূর্বপুরুষদের ওপরও আল্লাহর যে নিআমত এসেছে, তারও শোকর আদায় করা আমার জন্য জরুরি। আল্লাহর কাছে সে তাওফীকই চাওয়া হচ্ছে এ আয়াতে।

وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ.

আর আমাকে এমন নেক আমলের তাওফীক দান করুন, যে নেক আমলে আপনি সন্তুষ্ট হন। আমি যেন ঠিক ঠিক আমল করতে পারি। এমন ঠিকভাবে যে, আপনি সন্তুষ্ট হবেন।

وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي.

আমার সন্তানদের ক্ষেত্রে আপনি আমার জন্য সালাহ দান করুন! অর্থাৎ সন্তানদের ক্ষেত্রে আমার সবকিছু ঠিক করে দিন!

আমার সন্তানদেরকে নেক বানিয়ে দিন এখানে শুধু এটুকু বলা হয়নি; বলা হয়েছে

وَأَصْلِحْ لِي.

অথার্ৎ اكتب لي الصلاح  আমার জন্য সালাহ দান করুন।

আমার সন্তানদের বিষয়ে সবকিছু ঠিক করে দিন! সন্তানের তালীম-তরবিয়তের বিষয় আছে, এছাড়াও আরও যত সমস্যা এবং জটিলতা আছে, সবকিছু আপনিই ঠিক করে দিন! আমি কিছু করতে জানি না। আমার সাধ্যেও নেই কোনো কিছু করার।

হাঁ, সন্তানের তরবিয়তের জন্য সার্বিক চেষ্টা আমাকে করতে হবে। নিজেকে সচেতন হতে হবে। সাথে আল্লাহর নিকট দুআও করতে হবে।

إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ.

আমি আপনার দিকে রুজু করছি এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের অন্তভুর্ক্ত। অর্থাৎ আপনার সকল বিধান আমি মেনে নিচ্ছি এবং আপনার দিকে আমি রুজু করছি। আপনি আমার প্রতি দয়া করুন! আমার মা-বাবার ওপর আপনার যে নিআমত ও অনুগ্রহ রয়েছে, আমাকে সেগুলোর শোকর আদায় করার তাওফীক দান করুন! আর আমার সন্তানদের বিষয়ে আপনিই যিম্মাদার হয়ে যান!

এ হল এক প্রকারের ইনসান। আল্লাহ্ যদিও সকল ইনসানকেই বলেছেনদেখো, তোমাদের বাবা-মা তোমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তোমরা তাঁদের সাথে সদ্ব্যবহার করো! কিন্তু এই বিধানের ওপর আমল করার ক্ষেত্রে ইনসান দুভাগে বিভক্ত।

এক প্রকার হল, যারা আল্লাহর ইবাদত করে, মা-বাবার হক আদায় করে, এভাবে আল্লাহর কাছে দুআ করে, যেসব ত্রুটি হচ্ছে সেগুলোর জন্য তওবা করে, আর সামনে যেন ভালোভাবে আল্লাহর হুকুম মানতে পারে, সেজন্যও আল্লাহর কাছে এ দুআ করে।

 رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ.

বয়স যাদের ৪০ বছর হয়ে গেছে, তাদের এই দুআটি পড়া উচিত। এটি সূরা আহ্কাফের ১৫ নম্বর আয়াতে আছে।

তারপর হল

أُولَئِكَ الَّذِينَ نَتَقَبَّلُ عَنْهُمْ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا وَنَتَجَاوَزُ عَنْ سَيِّئَاتِهِمْ فِي أَصْحَابِ الْجَنَّةِ وَعْدَ الصِّدْقِ الَّذِي كَانُوا يُوعَدُونَ.

যারা এই কাজগুলো করে তাদের ভালো আমলগুলো আমি কবুল করি আর তাদের ত্রুটিগুলো উপেক্ষা করি। তাকে পাকড়াও করি না।

فِي أَصْحَابِ الْجَنَّةِ  .

তারা জান্নাতীদের অন্তভুর্ক্ত।

وَعْدَ الصِّدْقِ الَّذِي كَانُوا يُوعَدُونَ.

এদের নেক আমলগুলো কবুল হওয়া, গোনাহগুলো মাফ করা এবং এদের জান্নাতী হওয়া, সবকিছু এমন সত্য ওয়াদা যা তাদের সঙ্গে করা হত।

এ হল এক প্রকারের মানুষ।

আরেক প্রকারের মানুষ হলো

وَالَّذِي قَالَ لِوَالِدَيْهِ أُفٍّ لَكُمَا أَتَعِدَانِنِي أَنْ أُخْرَجَ وَقَدْ خَلَتِ الْقُرُونُ مِنْ قَبْلِي وَهُمَا يَسْتَغِيثَانِ اللَّهَ وَيْلَكَ آمِنْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ فَيَقُولُ مَا هَذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ، أُولَئِكَ الَّذِينَ حَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ إِنَّهُمْ كَانُوا خَاسِرِينَ، وَلِكُلٍّ دَرَجَاتٌ مِمَّا عَمِلُوا وَلِيُوَفِّيَهُمْ أَعْمَالَهُمْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ.

তার মা-বাবা দ্বীনদার, ঈমানওয়ালা, কিন্তু সে ঈমান আনছে না। ঈমানের রাস্তায় চলছে না। মা-বাবা যখন তাকে এ বলে নসীহত করে, বাবা, নামাযে যাও!

মা, পর্দা করো। আল্লাহর বিধান মেনে চলো! রাসূলুল্লাহর তরিকামতো চলো!

আমাদের সামনে আখেরাত আছে। সেখানে আল্লাহর কাছে হাজির হতে হবে না আমাদেরকে? তখন কী জওয়াব দেবে তুমি আল্লাহর কাছে?

এভাবে যখন মা-বাবা তাকে নসীহত করে, সে তখন বলে, ওহ! কী বলে এসব?! আখেরাত আবার কী? যুগ যুগ ধরে মানুষ দুনিয়াতে আসছে, যাচ্ছে। কোথায় কেয়ামত, কোথায় কী?

وَهُمَا يَسْتَغِيثَانِ اللَّهَ وَيْلَكَ آمِنْ.

মা-বাবা আল্লাহর দোহাই দিয়ে তাকে বলে, বাবা! তুই ঈমান আন্! ঈমান গ্রহণ কর্! ঈমানের পথ ধর্!

إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ.

নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। কিন্তু সে শোনে না। সে বলে

مَا هَذَا إِلَا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ.

এসব তো বানানো কথা। কিসের আবার আখেরাত?

أُولَئِكَ الَّذِينَ حَقَّ عَلَيْهِمُ الْقَوْلُ.

এ প্রকারের ইনসান যারা তাদের ব্যাপারে আল্লাহর শাস্তির ঘোষণা প্রযোজ্য।

فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِمْ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ.

এ এক দল, যারা পিছনেও ছিল। এখনও আছে। সামনেও থাকবে। ওদের সাথে এদের হাশর হবে।

إِنَّهُمْ كَانُوا خَاسِرِينَ.

তারা হল ক্ষতিগ্রস্ত।

আল্লাহ্! আমাদেরকে ভালো ইনসান হওয়ার তাওফীক দান করুন! যে ইনসানের দুআ হবে

رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ.

এখানে ذُرِّيَّتِي দ্বারা কেবল সরাসরি সন্তানরাই উদ্দেশ্য নয়, বরং কেয়ামত পর্যন্ত আমার বংশ এবং খান্দানে যত মানুষ আসতে থাকবে, সবই এখানে শামিল। সন্তান লাভের আশা পোষণ করা ভালো। সন্তানের জন্য নবীরাও দুআ করেছেন। কারণ সন্তান আল্লাহর দান। তিনিই দান করেন। গতকালই তো মনে হয় তেলাওয়াত করা হয়েছে

يَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ إِنَاثًا وَيَهَبُ لِمَنْ يَشَاءُ الذُّكُورَ.

আল্লাহ্ যাকে চান ছেলে সন্তান দান করেন, যাকে চান মেয়ে সন্তান দান করেন।

أَوْ يُزَوِّجُهُمْ ذُكْرَانًا وَإِنَاثًا.

কাউকে আবার ছেলে সন্তানও দান করেন, মেয়েও দান করেন। কাউকে আবার ছেলে-মেয়ে কোনোটাই দেন না। আয়াতের পরের অংশে আল্লাহ্ সেটাও বলেছেন

وَيَجْعَلُ مَنْ يَشَاءُ عَقِيمًا.

আসলে আল্লাহ্ যে ছেলেও দিচ্ছেন না, মেয়েও দিচ্ছেন না, সবই তো তাঁর হাতে। তাঁর ইচ্ছা। নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অনেক বয়স হয়ে গিয়েছে। কুরআন মাজীদে বয়সের পরিমাণটা উল্লেখ নেই। কিন্তু তারীখ ও ইতিহাসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, ৮০ বছর বা তারও বেশি।

মানে, বয়স এত বেশি হয়ে গেছে যে, বাহ্যিক বিচারে তাঁরা সন্তানের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে আল্লাহর রহমতের আশা ছাড়েননি। বাহ্যিক বিচারের অর্থ হলো, এত বয়স হয়ে গেছে, তাহলে আর কোত্থেকে? কিন্তু তার পরও আল্লাহ দান করেছেন। তাঁদের দুআ চালু ছিল। কিন্তু যখন খোশখবরি এসেছে তখন তাঁরাই আবার তাজ্জব হয়ে গেছেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রী কী বলেছিলেন? বলেছিলেন, এ আবার কেমন কথা! তাজ্জব হয়ে বললেন

ءَاَلِدُ وَ اَنَا عَجُوْزٌ وَّ هٰذَا بَعْلِيْ شَيْخًا اِنَّ هٰذَا لَشَيْءٌ عَجِيْبٌ.

আমি এ অবস্থায় সন্তান জন্ম দেব, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী, যে নিজেও বার্ধক্যে উপনীত? বাস্তবিকই এটা বড় আশ্চর্য ব্যাপার! সূরা হুদ (১১) : ৭২

অর্থাৎ আমরা দুজনই এখন বুড়ো-বুড়ি হয়ে গেছি। তারপরও কী আবার বলা হচ্ছে এখন! কিন্তু আল্লাহ্ যদি দিতে চান, তাহলে..?

যাকারিয়া আলাইহিস সালাম সন্তানের জন্য কান্নাকাটি করেছেন, আল্লাহ পাক সন্তান দান করেছেন। আবার এমনও আছে যে, অনেক কান্নাকাটি করার পরও শেষ পর্যন্ত দেওয়াই হয়নি। আল্লাহ্ দেননি। তা না দিলেই বা কী সমস্যা? দেননি তো আল্লাহ্! দিয়েছেন যাকে, আল্লাহ্ই দিয়েছেন। দুটোর মধ্যেই হেকমত নিহিত আছে।

আমার বন্ধুবান্ধব পরিচিতজনদের ছেলে হচ্ছে, মেয়ে হচ্ছে। আমার ভাইয়ের হচ্ছে, বোনের হচ্ছে। তাহলে আমার কেন হচ্ছে না? আরে, ওদেরকে দিচ্ছেন তো আল্লাহ্। আমাকে দেননি যে, তাও আল্লাহ্ই দেননি। হাঁ, এটা যেহেতু আল্লাহর একটা নিআমত, এজন্য আমি সেই নিআমতের আশায় থাকতে পারি। দুআ করতে পারি। এ সবকথা ঠিক আছে। কিন্তু যখন পাচ্ছি না, হচ্ছে না, তাহলে আশাও রাখব এবং সাথে আল্লাহর ফয়সালার ওপর সন্তুষ্টও থাকব।

আহ! মুহাম্মাদ আলী জাওহার রাহ. হিন্দুস্তানের অনেক বড় ব্যক্তি ছিলেন। মানুষ তাঁকে চেনে একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে। তাঁর দিন-রাতের শোগল ও কর্মতৎপরতা ছিল রাজনীতি। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তিনি ছিলেন অনেক বড় আল্লাহ্ওয়ালা বুযুর্গ। দীর্ঘদিন তাঁকে জেল খাটতে হয়েছে। আরও বিভিন্ন পরীক্ষা এসেছে তাঁর জীবনে। একবার তিনি জেলখানায়। তখন তাঁর মেয়ে খুব অসুস্থ। কঠিন রোগে আক্রান্ত। তিনি উর্দু কবিতায় আল্লাহর কাছে মুনাজাত করেছেন। সেই মুনাজাতে বলেছেন

تيري صحت ہميں مطلوب ليکن اس کو + نہيں منظور تو پھر ہم  کو بھي منظور نہيں

আল্লাহ্! আমার এ মেয়ে অসুস্থ। তার সুস্থতা যদি তোমার মনযুর না হয়, তুমি যদি না চাও, সে সুস্থ হোক, তাহলে আমিও চাই না...।  

নিজেকে আল্লাহর হাতে অর্পণ করে দিলেন। এরপর বললেন

خدايا تيري قدرت سے تيري رحمت کم نہيں

আল্লাহ্! একদিকে তোমার যেমন কুদরত আছে, আরেক দিকে আছে তোমার রহমতও। তুমি তো রহীম ও রহমান। কিন্তু তোমার কুদরতের চেয়ে কি তোমার রহমত কম? তোমার কুদরত আছে, তুমি সুস্থ করবে না, অসুস্থই রাখবে। এমনকি এই অসুস্থতার মধ্যে তুমি চাইলে নিয়েও যেতে পার। সে কুদরত আর ক্ষমতা তোমার আছে। কিন্তু তোমার কুদরত থেকে তোমার রহমত কি কম?

آمنہ بھي جو شفا پائے تو کچھ دور نہيں

আমার মেয়ে আমেনা আরোগ্য লাভ করুক। শেফা পেয়ে যাক! তোমার রহমত থেকে কি এটা খুব দূরে?

আসলে একজন মুমিনের অবস্থা এমনই হওয়া চাই। আল্লাহ্! তুমি চাও না, ঠিক আছে, আমিও চাই না। তবে আমি যেহেতু কমজোর, দুর্বল, আমি তোমার রহমতের ভিক্ষা চাই। কিন্তু আমার জন্য কোনটা ভালো ও কল্যাণকর আর কোনটা মন্দ ও অকল্যাণকর, সে তুমিই ভালো জান।

তো, রহমতের আশায় থাকব। এর পরও যদি দেখি, হচ্ছে না। তার মানে হলো আমার জন্য এতেই কল্যাণ।

 

মারকাযুদ দাওয়াহ জামে মসজিদ, হযরতপুর

২৩/২৫ রমযান ১৪৩৫ হিজরী

অনুলিখন : মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম

 

 

advertisement