মা-বোনদের রমযান ভাবনা
রমযান মাস আমাদের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। ইনশাআল্লাহ, আর কিছুদিন পরই শুরু হবে মহিমান্বিত মাস রমযান। এই রমযান মাস আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মুমিন নর-নারীর জন্য এক অনন্য নিআমত। ইবাদতের জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। এই মাসে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত নাযিল হয়। মুমিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি আমলে সাওয়াব বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন রমযান মাস আসে তখন জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়।’ —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৭৯
সিয়ামের ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা হাদীসে কুদসিতে বলেন, ‘রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দেব।’ —সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯০৪
নারী-পুরুষ সকলের জন্য রমযানের বিষয়টি সমান হলেও বিভিন্ন কারণে নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য ও আমলের বিষয়টি একটু ভিন্ন। একদিকে যেমন নারীরা ঘরে থাকায় কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন, অন্যদিকে সাহরী ও ইফতার প্রস্তুতিতে অনেক ব্যস্তও থাকেন। এই স্বস্তি ও ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে মা-বোনেরা যেন রমযানের সুযোগকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে অফুরন্ত কল্যাণ সাধন করতে পারেন, নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন সে জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তেমনিভাবে কিছু বিষয় থেকে বিরত থাকতে হবে। এখানে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হচ্ছে :
প্রস্তুতিপর্ব
এক. পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করুন
রমযান থেকে পরিপূর্ণ উপকৃত হতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রস্তুতি হিসেবে প্রথম আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করা উচিত যেন খুব সহজেই রমযান পর্যন্ত পৌঁছা যায় এবং যথাযথভাবে তা পালন করা যায়।
দুই. জরুরি ইলম হাসিল করুন।
রমযান শুরু হওয়ার পূর্বেই রমযান বিষয়ে জরুরি ইলম অর্জন করা উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।’ অতএব মুমিন মা-বোনেরাও এই নির্দেশের অন্তভুর্ক্ত হিসেবে রমযান বিষয়ে প্রয়োজনীয় ইলম অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে মারকাযুদ দাওয়া থেকে প্রকাশিত ‘সিয়াম ও রমযান ফাযায়েল ও মাসায়েল’ গ্রন্থটি পাঠ করে নিতে পারলেও অনেক উপকার হবে।
তিন. কৃতজ্ঞতা আদায় করুন
রমযান শুরুর সাথে সাথে রমযানের মতো মহান ও মহিমান্বিত নিআমত লাভের দরুন আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করুন। শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা আদায় করলে আল্লাহ তাআলা আরও নিআমত বৃদ্ধি করে দেবেন। অন্যান্য আরও অনেক ইবাদতের সুযোগ সৃষ্টি করে দিবেন।
চার. পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।
রমযানে গৃহস্থালী কাজ, ইবাদত, তিলাওয়াতসহ সবকিছু যেন সুন্দরভাবে করা যায় সেজন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। কারণ সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সময় থেকে বেশি উপকৃত হওয়া যায়। অতি অল্প সময়ে অনেক কাজ করা যায়। প্রতিটি কাজ নিপুণভাবে সম্পাদিত হয়।
পাঁচ. আমলের প্রতিজ্ঞা করুন।
রমযানে যত বেশি আমল করা যাবে ততই লাভ। বেশি আমল এবং রমযানকে বেশি কাজে লাগানোর জন্য তাই মানসিকভাবে নিজ থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত। যেন সম্পূর্ণ রমযানকে নেক আমল এবং সাওয়াবের কাজ দিয়ে ভরপুর রাখা যায়। যেন রমযান বিনষ্ট করে এমন সব অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা যায়। তাই অবশ্যই মনে মনে আমলের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা রাখুন।
আমল পর্ব
রমযান আমলের মাস। ইবাদতের মাস। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের মাস। বিশেষত তাকওয়া অর্জনের অনন্য সময় মহিমান্বিত রমযান। তাই রমযান শুরু হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমলে মনোনিবেশ করতে হবে। যেসব আমল করার দিকে খুব মনোযোগী হতে হবে তা হচ্ছে :
এক. কুরআন তিলাওয়াত করুন
রমযান কুরআন নাযিলের মাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমযান এমন এক মাস, এমাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে, যা সমগ্র মানবজাতির জন্যে দিশারি, সত্যপথের স্পষ্ট পথনির্দেশকারী এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরূপণকারী।’ —সূরা বাকারাহ (২) : ১৮৫
বিভিন্ন হাদীসে রমযানে কুরআন তিলাওয়াতের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। তাই রমযান মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতের দিকে মনোনিবেশ করুন। কুরআন খতম করতে চেষ্টা করুন।
তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশুদ্ধ তিলাওয়াত করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কুরআন তিলাওয়াত করো।’ —সূরা মুযযাম্মিল : ৪
অধিক খতমের নিয়তে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে ভুল করা যাবে না। এক্ষেত্রে কারও যদি তিলাওয়াত বিশুদ্ধ না থাকে বা কুরআন ভালোভাবে শেখা হয়নি তারা এই রমযানের তিলাওয়াত শিখে নিন। তবে রমযানের পূর্ব থেকেই কুরআন শিক্ষার ব্যবস্থা করলে রমযানের অধিক সাওয়াব হাসিল করা যাবে। তাই রমযানের পূর্বেই কুরআন তিলাওয়াত শিখে নিন। অন্যদিকে বাংলা কুরআন দেখে তিলাওয়াত করা থেকে বিরত থাকুন। এতে কুরআনের শব্দগত ও অর্থগত দিক বিকৃত হয়। একারণে উলামায়ে কেরাম সম্মিলিতভাবে বাংলা দেখে কুরআন তিলাওয়াতকে নাজায়েয বলেছেন।
দুই. ফরজ সালাতে গুরুত্ব দিন
রমযানে সিয়াম পালনের কারণে শরীরে ক্লান্তি চলে আসে। ক্লান্তিতে নামাযে কখনো কখনো অলসতা লাগে। তাই আজান হলে সাথে সাথেই সালাত আদায় করে নিন। ফরজ সালাতে কোনোভাবেই আলসেমি করা যাবে না। মা-বোনেরা অনেক সময় গুরুত্বের সাথে সিয়াম পালন করলেও সালাত আদায়ে তাদের গাফিলতি দেখা যায়। এটি কোনো সময়ের জন্যই শোভনীয় নয়।
তিন. তারাবি ও নফল সালাত
রমযানে একটি বিশেষ সুযোগ তারাবি আদায় করা। বেশি বেশি তিলাওয়াতের মাধ্যমে বাসায় তারাবি আদায় করুন। বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করুন।
চার. কিয়ামুল লাইল আদায় করুন
রমযানে কিয়ামুল লাইল আদায়ের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়। সাহরী খেতে আমাদেরকে ঘুম থেকে উঠতেই হয়। সেসময় একটু চেষ্টা করলেই আমরা নিয়মিত কিয়ামুল লাইল আদায় করতে পারি। রমযানে কিয়ামুল লাইল আদায় করার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে রমযানে কিয়াম করবে তার পূর্বের গুনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন।’ —সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭
পাঁচ. দান—সদকা করুন
রমযান মাসকে বলা হয় দানের মাস। এই মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে দান-সদকা করতেন। হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদেরকে বিশেষভাবে সদকার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে নারীরা তোমরা সদকা করো এবং বেশি পরিমাণে ইস্তেগফার করো; কারণ আমি তোমাদেরকে সর্বাধিক জাহান্নামে দেখেছি।’ অন্য হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে নারীরা, সদকা করো যদিও তা তোমাদের চুড়ি থেকে হয়।’ —সহীহ বুখারী, হাদীস ৩০৪
এক্ষেত্রে সাদাকায়ে জারিয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ এমন সদকা যার মাধ্যমে স্থায়ী কোনো কাজ হবে। হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন ইবনে আদম ইন্তেকাল করে তখন তার আমল করার সামর্থ্য শেষ হয়ে যায়। তবে তিনভাবে সে সাওয়াব পেতে পারে :
১. সাদাকায়ে জারিয়াহ। ২. উপকারী ইলম। ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে।’
ছয়. ইফতার করাতে চেষ্টা করুন
রমযানে ইফতার করানো একটি মহৎ ইবাদত। তাই অন্য ব্যক্তিকে ইফতার করাতে চেষ্টা করুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাউকে ইফতার করাবে তাকে রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব দেওয়া হবে অথচ তার সাওয়াব থেকে বিন্দু পরিমাণ কমানো হবে না।’ —জামে তিরমিযী, হাদীস ৮০৭
এক্ষেত্রে রমযানের পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা যেতে পারে। সারা বছরেও এর প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। বাসায় একটি ‘সদকাহ বক্স’ রেখে সকলে মিলে টাকা জমিয়ে রমযানে তা দিয়ে অনেককেই ইফতারি করানো যায়।
সাত. অধিক পরিমাণে দুআ করুন
রমযানকে বলা হয় দুআর মাস। কুরআনে দুআকে সিয়ামের আয়াতের সাথেই উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমাসে অনেক বেশি দুআ করতেন। রমযানে সিয়াম পালনকারীর দুআ ফেরত দেওয়া হয় না। বিশেষত ইফতারের সময় দুআ কবুল হয়। তাই বেশি বেশি দুআ করতে চেষ্টা করুন।
আট. সাহরীকে গুরুত্ব দিন
রমযানে সাহরী গ্রহণ করা একটি বিশেষ ইবাদত। এতে রয়েছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ বরকত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা সাহরী করো; কেননা সাহরীতে রয়েছে বরকত। —সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৫
তাই পরিবারের সকলেই যেন সাহরী করে সেদিকে নজর দিতে হবে। বিশেষত তরুণ-তরুণীদের অনেকেই ঘুমের কারণে সাহরী ত্যাগ করে। এটি কোনোভাবেই উচিত নয়। তাই আপনি সাহরী প্রস্তুতের সাথে সবার সাহরী খাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
নয়. শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করুন
রমযানের শেষ দশক সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই দশকে লাইলাতুল কদর বা কদর রজনী প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। এই রজনীর ব্যাপারে কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চাইতেও উত্তম।’ —সূরা কদর : ৩
তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশকে অনেক বেশি ইবাদত করতেন। হাদীসে এসেছে, তিনি আমল বেশি করার জন্য ভালোভাবে কোমর বেঁধে নিতেন। পরিবারের লোকদের ডেকে দিতেন। —সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৪০
দশ. নিজ ঘরে এতেকাফ করুন
রমযানের শেষ দশকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতেকাফ করেছেন। এই দশকের জন্য এতেকাফ অনন্য ইবাদত। তাই মা-বোনরা চাইলে নিজ ঘরে পূর্ণ পর্দা বজায় রেখে এতেকাফ করতে পারেন। এর মাধ্যমে রমযানের মহামূল্যবান এই সময়কে ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে। তেমনিভাবে মহিমান্বিত রাত লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির মাধ্যমে সৌভাগ্যবান হওয়া যাবে। তাই মা-বোনদের এই সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত।
এতেকাফের মাসআলা জানতে ‘মাসআলা-মাসায়েল’ শীর্ষক প্রবন্ধটি দেখা যেতে পারে।
যা থেকে বিরত থাকতে হবে
মহিমান্বিত রমযানকে পরিপূর্ণ আমল ও ইবাদতে কাটাতে চাইলে কিছু বিষয় থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। সেসব বিষয় হচ্ছে :
এক. যেকোনো ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকুন।
রমযানের পবিত্রতা রক্ষার্থে যেকোনো গুনাহ ও হারাম থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। সিয়াম পালনে খাবার থেকে যেভাবে বিরত থাকতে হয। তেমনি গুনাহ থেকেও বিরত থাকতে হয়। তাই পরনিন্দা, গীবত, অশালীন কথা থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যের সাথে যেকোনো ধরনের বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে হবে। কেউ যদি বিতর্ক করতে আসে তাকে বলতে হবে, আমি রোজাদার।
দুই. সময় অপচয় থেকে বিরত থাকুন
রমযানের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটি অংশও অনর্থক কাজে নষ্ট করা যাবে না। মা-বোনদের অনেকেই দিনের বেলা যখন সময় কাটতে চায় না তখন পাশের বাসার অন্য নারীর সাথে কথা বলে সময় পার করেন। কখনো অধিক পরিমাণে ঘুমিয়ে সময় অতিবাহিত করেন। আবার কেউ কেউ শপিং বা প্রয়োজন ছাড়াই বাজারে চলে যান। এটি কোনোভাবেই উচিত নয়।
তিন. টেলিভিশন দেখা থেকে বিরত থাকুন
রমযান উপলক্ষ্যে বিভিন্ন চ্যানেল অনেক অনুষ্ঠান করে থাকে। এসব অনুষ্ঠান দেখা থেকে বিরত থাকুন। বিশেষত নাটক, মুভি, নাচগান ও অশ্লীল কিছু দেখা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। এমনকি মুঠোফোন ব্যবহার থেকেও দূরে থাকতে চেষ্টা করুন। এতে চোখের গুনাহ থেকে বাঁচা সহজ হবে, ইনশাআল্লাহ।
চার. সারাদিন বিভিন্ন খাবার প্রস্তুতিতে সময় নষ্ট করবেন না
অনেক মা-বোনের কাজ দেখে বা শুনে মনে হয় রমযান বিশেষ বিশেষ খাবার প্রস্তুত করার মাস। তাই দিনের এমনকি রাতেরও দীর্ঘ একটি সময় চলে যায় এসব রেসিপি দেখতে এবং প্রস্তুত করতে। সালাফের নারীদের মধ্যে এবিষয়টি কখনোই পাওয়া যায়নি। অবশ্যই পরিবারের লোকদের জন্য ভালো কিছু প্রস্তুত করবেন। তবে এর জন্য সময় নির্ধারিত রাখুন। পরিমাণ নির্দিষ্ট রাখুন। অধিক পরিমাণে সাহরী ও ইফতার প্রস্তুত করে রমযানকে খাবারের মাস বানাবেন না।
পাঁচ. কাজের লোকদের বেশি চাপ দিবেন না
আমাদের মা-বোনদের মধ্যে যারা উপার্জনের জন্য অন্যের বাসায় কাজ করেন তাদেরওতো সিয়াম পালন করতে হবে। রমযান মাসে ইবাদত করতে ইচ্ছে হয়। তাই তাদের উপর অতিরিক্ত কাজের চাপ দেবেন না। বরং তাদেরকেও সুন্দরভাবে সিয়াম পালনে সাহায্য করুন। পচা ও বাসি খাবারের পরিবর্তে তাদের জন্য ভালো খাবার বরাদ্দ রাখুন। এতে সেই মা ও বোন সহজে সিয়াম পালন করতে পারবে আর আপনিও তাকে সহযোগিতা করায় সাওয়াব পাবেন, ইনশাআল্লাহ।
ছয়. বেপর্দা চলাফেরা থেকে বিরত থাকুন
নারীর জন্য পর্দা রক্ষা করে চলা ফরজ। কোনো প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে চাইলে অবশ্যই পর্দা রক্ষা করে যেতে হবে। অন্যান্য সময়ের মতো রমযান মাসেও অনেক মা-বোন এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির দিকে ভ্রম্নক্ষেপ করেন না। এতে নিজে গুনাহে লিপ্ত হওয়া সাথে সাথে অন্যের গুনাহেরও কারণ হয়। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তাই পবিত্র ও মহিমান্বিত রমযানের দিকে লক্ষ্য করে পর্দার প্রতি যত্নবান হতে চেষ্টা করুন।
মহিমান্বিত মাস রমযানকে পরিপূর্ণ কাজে লাগাতে একটি রুটিন প্রস্তুত করে আমল ও ইবাদতের কাজগুলো বেশি বেশি করুন। যে কাজ পরে করলেও চলবে তা রমযানের পরের জন্য রেখে দিন। নেতিবাচক ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকুন। এভাবে পুরো রমযান চলতে পারলে এমন মূল্যবান সময়গুলো কাজে লাগবে। এই রমযান হয়ে ওঠবে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রমযান।