শাবান-শাওয়াল ১৪৪৪   ||   মার্চ-মে ২০২৩

রমযান ও ঈদ : নেকী আনন্দ সুস্থতা আমারও

ডা. আফরোজা বেগম

আমরা কোনো কিছু হাতে নিয়ে দেখি, এটা কোন্ দেশের তৈরি? চায়না, আমেরিকা, ইন্ডিয়া নাকি বাংলাদেশের? আমেরিকার তৈরি জিনিস পেয়ে আমরা খুশি হয়ে যাই। যদি মেয়েদের ক্ষেত্রে বলা হয়, মেয়েরা কোথাকার তৈরি? তাহলে বলা যাবে জান্নাতের তৈরি।

আল্লাহ পাক যখন আদম আ.কে সৃষ্টি করার ইচ্ছে করলেন, ফেরেশতাদের হুকুম করলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি এনে জড়ো করার জন্য। এরপর তার অবয়ব দান করেন। এরপর তার মাঝে রূহ ফুঁকে দেন। অন্যদিকে আল্লাহ পাক ইচ্ছে করলেন, আদম আ.-এর জন্য একজন জান্নাতী সঙ্গী বানানোর। জান্নাতের ভেতরেই আল্লাহ পাকের হুকুমে হাওয়া আ. সৃষ্টি হয়ে গেলেন। এজন্যই মেয়েরা জান্নাতের তৈরি।

মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিয়ের পরেও বাবার বাড়িতে যাওয়ার জন্য তারা উদগ্রীব থাকে। অনেক ব্যস্ততা, ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। এর মধ্যে স্বামী এসে বললেন, চলো তোমার বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। সাথে সাথে তার সমস্ত ক্লান্তি শেষ। সে দ্রুত হাতে সব গুছিয়ে বাবা-মায়ের জন্য পছন্দের কিছু তৈরি করে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। জান্নাত হচ্ছে মেয়েদের বাবার বাড়ি। জান্নাতে যাওয়ার জন্যই মেয়েরা উদগ্রীব থাকে আর জান্নাতে যেতে হলে নেকী উপার্জন ছাড়া উপায় নেই।

আমাদের সামনে সেই নেকী উপার্জনের একটি মৌসুম আসছে রমযান। সবকিছুর একটা মৌসুম থাকে। ফলের মৌসুম, পিঠা-পায়েসের মৌসুম, ব্যবসায়ীদের ব্যবসার মৌসুম। টাকা উপার্জন করে যেমন দুনিয়ায় ঘর বানানো যায়, নেকী উপার্জন করে তেমনি জান্নাতে প্রাসাদ বানানো যায়।

আমাদের জীবন এখনো শেষ হয়নি। প্রতিদিন কবর আমাদের ডেকে বলে, আমি পোকামাকড়ের ঘর, নিঃসঙ্গ একাকিত্বের ঘর, নির্জনতার ঘর। প্রতিদিন ঘোষণা করা হচ্ছে, অমুকের বেটা অমুক ইন্তেকাল করেছে। একদিন আমার নামও ঘোষণা করা হবে। আমাকে জমিনের উপর থেকে জমিনের নিচে চলে যেতে হবে। ছোট্ট একটি ঘর। কোনো দরজা নেই, জানালা নেই! আলো নেই, বাতাস নেই! মাটি আর মাটি! উপরে মাটি, নিচে মাটি, চারপাশে মাটি। শুধু আমিই জানব, ওই সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে আমার উপর দিয়ে কী বয়ে যাবে। কেউ জানবে না। ওই ঘরটাকে সুন্দর করার জন্য এখনই সুযোগ নেকী উপার্জন করার। হয়তো এই রমযানই আমার জীবনের শেষ রমযান, আর কোনো শবে কদর হয়তো আমি পাব না। কাজেই এখনই সুযোগ কাজে লেগে পড়ার।

কোনো ফাইনাল পরীক্ষা অথবা বোর্ড পরীক্ষার আগে আমরা একটি রুটিন করে নিই। যাতে সময় ও মেধার অপচয় না হয়। ঠিক রমযান হচ্ছে আমাদের জীবনের নেকী অর্জন করার সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। কাজেই এর জন্য পূর্ব প্রস্তুতি দরকার। প্রথমেই একটি রুটিন তৈরি করি, যেন রমযানের একটি সেকেন্ডও আমার অপচয় না হয়।

মুমিন বান্দা যখন কোনো নেক কাজের শুধু নিয়ত করে, সঙ্গে সঙ্গে তার জন্য একটি নেকী লেখা হয়। মুমিন বান্দা যখন নেকীর নিয়ত করে এবং নেক কাজটা করে তখন তার জন্য ১০ থেকে ৭ শ গুন পর্যন্ত নেকী লেখা হয়। সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩০

কিন্তু আমরা মেয়েরা এ ব্যাপারে অনেক গাফেল।

রমযানের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শবে বরাতের পরেই আমাদের কাজগুলো গুছিয়ে নিই। ঘরদোর পরিষ্কার করা, পর্দা ধোয়া, ক্যাবিনেট পরিষ্কার, খাটের নিচ পরিষ্কার, রমযানের বাজারের যতটুকু করা যায় করে গুছিয়ে ফেলা, ঈদেরও কেনাকাটা পারলে করে ফেলা। দেখা যায়, রমযানের শেষ ১০ দিন শুধু ঈদের কেনা-কাটা করার জন্য অনেক পুরুষ এতেকাফে বসতে পারেন না। আমরা নারীরা তাদেরকে অস্থির করে ফেলি শপিংয়ের জন্য। তাই উত্তম হল, রমযানের আগেই প্রয়োজনীয় কেনা-কাটা করে ফেলা। আল্লাহ পাকের কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মসজিদ, সবচেয়ে অপ্রিয় জায়গা বাজার। এজন্য বোনেরা আমার! নিয়ত করি, এই রমযানে আমরা নারীরা বাজারে যাব না। স্বামী আমার জন্য যাই আনবেন তা-ই খুশিমনে গ্রহণ করব ইনশাআল্লাহ।

শবে বরাতের পর থেকেই আমরা ঘরে ফাযায়েলে রমযানের তালীম শুরু করি। এতে আমরা, আমার স্বামী-সন্তানদের মধ্যে রমযানের গুরুত্ব উপলব্ধি হবে। এতেকাফ, শবে কদর নিয়ে আলোচনা করি। রমযানের চাঁদ যেদিন দেখা যাবে নতুন চাঁদ দেখার দুআ পড়ে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর কাছে দুআ করি, যেন এই রমযানই হয় আমার গুনাহ মাফের এবং জান্নাত লাভের ওসিলা।

রমযানের সাথে কুরআন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্য আমরা যারা শুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে পারি, তারা যত পারি কুরআন তিলাওয়াত করি। যারা শুদ্ধভাবে পারি না, তারা মেহনত করিকুরআন শুদ্ধভাবে শেখার। রমযানে শয়তান শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকে তাই বান্দার জন্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। আমরা পাক্কা নিয়ত করিএই রমযানে ফেতনার ডিভাইস চালাব না। খুব প্রয়োজন না হলে একটা মাস একটু হিম্মত করি। আল্লাহ পাক সাহায্য করনেওয়ালা।

রমযানে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যত্নবান হই। দেখা যায়, যাদের সারা বছর গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেতে হয় না তাদেরও রমযানে ঔষধ সেবন করতে হয়। এজন্য রমযানে খাওয়ার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি পর্যায়ে না গিয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করি। সেহরীর সময় যারা পছন্দ করেন আম-দুধ-ভাত অথবা কলা-দুধ-ভাত খেতে তারা পেট ভর্তি না করে খেতে পারেন। পানি এক লিটারের মতো খাওয়া। যা-ই খাই খেয়াল রাখি, যেন পেটপুরে খাওয়া না হয়। রমযানে অতিরিক্ত ঝাল পরিহার করি। ইফতারির সময় অবশ্যই ইসুবগুল অথবা বাঙ্গির জুস বা শরবত খাওয়া, ভাজা-পোড়া তিন-চার পদ পরিহার করে এক পদ (হয় পেঁয়াজু/বেগুনি/আলুর চপ) রাখা, ছোলাবুট প্রতিদিনই রাখা যায়। এটি স্বাস্থ্যকর। পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশি ফল, শরবতে সাদা চিনির পরিবর্তে লালচিনি অথবা আখের গুড় ব্যবহার করা ভালো। শোয়া পর্যন্ত দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করার চেষ্টা করা। অনেকে ওজু-ইস্তেঞ্জার ভয়ে পানি পান করে না। এটা কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। ইফতারিতে মোটামুটি পেট ভরে গেলে রাতে শোয়ার আগে না খাওয়াই ভালো। খুব বেশি হলে ১টি ডিম অথবা ১গ্লাস দুধ পান করা যায়। যারা গর্ভবতী তাদের জন্য উত্তম হল, ইফতারে খেজুর, শরবত খেয়ে নামায পড়ে ভাজাপোড়া এড়িয়ে ভাত খেয়ে নেওয়া। এতে এসিডিটি অনেক কম হয়। যারা দুগ্ধদানকারী মা তারা অবশ্যই তরল-জাতীয় খাবার বেশি খাবেন। ইনশাআল্লাহ সন্তানকে দুধপান করাতে কোনো অসুবিধা হবে না। সমস্যা হলে দুধ বৃদ্ধির ঔষধ সেবন করা যায়। যারা দুর্বল তারা ওরস্যালাইন আধা থেকে এক লিটার পান করতে পারি। এতে শরীরে লবণের মাত্রা ঠিক থাকবে। ইফতারিতে দই-চিড়ার একটা আইটেম রাখলে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হয়।

রমযান ও তারাবীহর মাঝে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যারা কুরআনে হাফেযা তারাতো অবশ্যই তারাবীহতে পূর্ণ এক খতম কুরআন পড়বেন। যারা গাইরে হাফেয তারাও ৩০ নম্বর পারার শেষ ২০টা সূরা মুখস্থ করে তারাবীহর ২০  রাকাতে পড়ি। আমরা সাহরীর সময় একটু আগে উঠে অবশ্যই তাহাজ্জুদ ২/৪ রাকাত যা পারি পড়ে দুআ করি। আল্লাহর রাসূলের শেখানো শবে কদরের দুআটা  প্রতি রাতেই পড়ি। এর পর খাবার-দাবারের আয়োজন করি। যেসব ঘরে মুরব্বীরা আছেনবাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়িদের আগে খাবার দেই। তাঁদের খেতে একটু সময় লাগে। সাত বছরের উপরের বাচ্চাদেরকে সাহরীর সময় উঠানোর অভ্যাস করানো যায়। আল্লাহ পাক আমাদের জন্য অনেক সহজ করে দিয়েছেন হটপট, ওভেন, থার্মোফ্লাস্ক থাকলে ব্যবহার করে সময় বাঁচাতে পারি। অবশ্যই খাদেমাদের ব্যাপারে সচেতন হই। ওদের নামায, রোযা, পর্দার ব্যাপারে খেয়াল করি। কেননা ওদের ব্যাপারেও আমরা জিজ্ঞাসিত হব। রমযানে যতটুকু পারা যায় খাদেমাদের কাজের বোঝা হালকা করে দেই। ওরাও রোযাদার। রমযানে যে খাদেমাদের কাজের বোঝা হালকা করবে, আল্লাহ পাক তার জন্য আখেরাতের বোঝা হালকা করে দেবেন। ওদের খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রামের ব্যাপারে সচেতন হই। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার দেই। বাসি-পচা খাবার দেয়া থেকে বিরত থাকি।

সাহরী খেয়ে যদি সম্ভব হয় ইশরাক পর্যন্ত তাসবিহাত ও তিলাওয়াতে সময় কাটাই। এ সময়টা খুব সুন্দর। বাচ্চারা ঘুমে থাকে। কোনো সাড়া শব্দ নেই। আমি আমার মাওলার সাথে কথা বলছি। প্রয়োজনে সাহরীর সময় চা-কফি খেয়ে নেয়া যেতে পারে। ইশরাকের পর দুই ঘণ্টা পরিপূর্ণ বিশ্রাম। ঘুম থেকে উঠে চাশতের নামায পড়ে কাজে হাত দেই। বাচ্চাদের সামলানো, দুপুরের রান্নার সাথে রাতের এবং সাহরীর রান্না, ইফতারির আয়োজন যতদূর সম্ভব সেরে রাখি। ঘরের সবাই মিলে পরামর্শ করি রমযানে খাবার-দাবারে কীভাবে কম সময় লাগানো যায়।

কাজ গুছিয়ে আমরা চেষ্টা করি আউওয়াল ওয়াক্তে যোহরের নামায পড়ার। অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত নামায সুন্নত ও নফলসহ পড়ব। কমপক্ষে এক পারা কুরআন তিলাওয়াত করে একটু বিশ্রাম নিতে পারি। আসরের নামায আউওয়াল ওয়াক্তে চার রাকাত সুন্নাতে গাইরে মুয়াক্কাদাসহ আদায় করি। তিন তাসবীহ আদায় করে যত দ্রুত সম্ভব ইফতারী গুছিয়ে নেই। ঘরের বড় সন্তানেরাও কাজে হাত লাগাবে। অবশ্যই ইফতারীর আধাঘণ্টা আগে আমি অবসর হয়ে যাই। ঘরের মাহরাম সবাইকে নিয়ে কিতাবী তালিম করে দুআর এহতেমাম করি। দুআ অনেক বড় হাতিয়ার। ইফতারীর সময় লক্ষ লক্ষ মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে জান্নাতীদের তালিকায় লিখে দেয়া হয়। এজন্য খুব করে দুআর এহতেমাম করা। ইফতারী সামনে রেখে বাচ্চাদের মধ্যে উম্মতের দরদ পয়দা করার চেষ্টা করি। তুমি এত মজার মজার জিনিস ইফতারীতে খাচ্ছ অথচ তোমার মতোই কত শিশু না খেয়ে কাঁদছে। ওদের জন্য দুআ করি। ছোট যারা রোযা রেখেছে অবশ্যই ইফতারীর আগে ওদেরকে সময় দেয়া। সাথে সাথে রাখা। যাতে ওদের কষ্টটা লাঘব হয়। তাদেরকে বোঝানো, এত খাবার তবুও তুমি খাচ্ছ না। কেননা তোমার রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আল্লাহ পাকের ভয়ে তুমি একাজ করছ। এরকম প্রত্যেক কাজে আল্লাহকে ভয় করবে। এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক তোমাকে জান্নাতের কত মজাদার খানা খাওয়াবেন।

দেখা যায়, ঘরের মেয়েরা ভাজা পোড়া করছে আর আযান হচ্ছে। ইফতারীর দুআ পড়ার সময়টুকুও আমরা পাই না। এরকম যাতে আমার না হয়। অবশ্য দুয়েকদিন অথবা মেহমান আসলে ভিন্ন কথা। মাগরিবের নামায নফলসহ পড়ার চেষ্টা করি। সারারাত সজাগ থাকার নিয়ত থাকলে ইফতারীর পর একটু বিশ্রাম নিয়ে এশা ও তারাবীহ আদায় করি। না হয় ইফতারী করেই সংসারের কাজ গুছিয়ে ফেলি। বাচ্চাদেরকে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত করে স্বামীকে নামাযে পাঠিয়ে আমিও দাঁড়িয়ে যাই। যাদের ঘরে দু-তিন জন হাফেযা আছে তারা কুরআন খতমের একটি প্রতিযোগিতা করতে পারিকে কত খতম করতে পারে। যে বেশি করবে তাকে প্রথম, এরপর দ্বিতীয়, তৃতীয় পুরস্কার। রমযানের রাত তো ইবাদতের রাত। কিছুক্ষণ পর পর চা-বিস্কিটের ব্যবস্থা করে একটা সুন্দর আবহ সৃষ্টি করা যায়। আল্লাহ তাওফীকদাতা। 

ঘরে এসি ছাড়ার পর দরজা-জানালা খোলা রাখলে ঘর সহজে ঠাণ্ডা হয় না। দরজা-জানালা বন্ধ করে কয়েক মিনিট এসি চালালে ঘর ঠাণ্ডা হয়। এজন্য আমাদের অবশ্যই গুনাহের দরজা বন্ধ করে নেকী উপার্জন করতে হবে। না হয় আমাদের আমলনামা হবে তলাবিহীন ঝুড়ি। আমলের মধ্যে এখলাস পয়দা করার চেষ্টা করি। রমযান মাস। খুব গরম। ঘরে কেউ নেই। আমি যদি ফ্রিজ থেকে এক ঢোঁক পানি পান করি কেউ দেখবে না। তবুও আমি খাচ্ছি না কেন? আমার আল্লাহ আমাকে দেখছেন বলে। প্রত্যেক কাজে এরকম জযবা পয়দা করা। ছোট বাচ্চারা রোযা রাখলে সবাইকে বলে বেড়ানো উচিত নয়। এতে ওদের এখলাস নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার বদনজরও লাগতে পারে।

রমযানের শেষ ১০ দিন ইবাদতে উঠে-পড়ে লাগা। যদি সম্ভব হয় বাড়ির মুরব্বীবাবা, শ্বশুর, স্বামীকে ১০ দিনের জন্য মসজিদে এতেকাফে বসার জন্য উৎসাহিত করা। আল্লাহর রাসূল প্রত্যেক রমযানে শেষ ১০ দিন এতেকাফ করেছেন। জীবনের শেষ রমযানে ২০ দিন এতেকাফ করেছেন। এতে শবে কদর তালাশ করা সহজ হয়। আমরা মেয়েরাও এ ব্যাপারে সচেতন হই। এক/দুদিন নফল এতেকাফে বসতে পারি। অবশ্যই সেটা স্বামীর অনুমতি নিয়ে।

আমরা মায়েরা আরও সচেতন হই। বিশেষ করে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়েরা। গর্ভবতী মায়েরা দেখা যার, বমি করলেই মনে করে রোযা ভেঙ্গে গিয়েছে। আসলে তা ঠিক নয়। দুয়েকবার বমি মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য তেমন ঝঁুকিপূর্ণ নয়। রমযানে আমরা গর্ভবতী মায়েরা বমি রোধের ঔষধ খেতে পারি। তবুও সামান্য অজুহাতে রমযানের রোযা ছেড়ে না দেই। বিশেষ করে যাদের সন্তান বালেগ-বালেগা হয়েছে তারা একটু সচেতন হই। সামান্য দুনিয়াবী পরীক্ষার জন্য তাকে রোযা রাখতে বারণ না করি। এমন করলে ফরয তরক করার কবীরা গুনাহ হবে। এভাবে আমি আমার আদরের সন্তানকে জাহান্নামের আগুনের উপযুক্ত করে দিচ্ছি। আল্লাহ পাক হেফাযত করুন।

রমযানের সাথে আরেকটি বিষয় খুব জড়িত। তা হলো, যাকাত-ফিতরা। মহিলাদের অনেকে এই ব্যাপারে উদাসীন। আমার গহনা, টাকা ও সম্পত্তির যাকাত আমার উপর ফরয। আমার স্বামী যদি আমার যাকাত আদায় করে দেন তাহলে এটা তার অনুগ্রহ। কিন্তু তিনি আদায় না করলে আমি কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারব না। আমার সম্পদের যাকাত আমাকেই দিতে হবে। ফিতরার ব্যাপারেও সচেতন হই। এগুলো যেন উপযুক্ত ব্যক্তির হাতে পৌঁছে সে ব্যাপারেও সচেতন হওয়া। সাধারণত দেখা যায়, আমরা আমাদের খাদেমাদের বড় অঙ্কের টাকা যাকাত হিসেবে দেই। আবার এই চিন্তাও মাথায় আসে এতগুলো টাকা ওকে দিলাম ও আবার আমার সাথে নিমক হারামী করছে! এসব ধারণা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখি।

ঈদ মানে আনন্দ। দেখা যায় আমরা মেয়েরা এই ব্যাপারেও উদাসীন। রমযানের শেষ রাত চাঁদ রাত। ফযীলতের রাত। ঈদের আয়োজনের সাথে সাথে ইবাদতও করতে হবে। আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। ঈদের সুন্নাত আমলগুলোর মধ্যে সকাল সকাল উঠে গোসল করা। দেখা যায়, মেয়েরা কাজ করতে করতে দুপুরের পর গোসল করে নতুন কাপড় পরিধান করে। মেয়েরাও সকালেই গোসল করে নতুন কাপড় পরিধান করে স্বামীকে ঈদের জামাত থেকে আসার পর তাকে এস্তেকবাল করে মুসাফাহা করতে পারে।

ঈদের আনন্দ হিসেবে আমরাও মেহেদি লাগাব, সাজসজ্জা গ্রহণ করব। কাজ তো থাকবেই। এর মধ্য দিয়েই সময় বের করতে হয়। অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে, যেন ঈদের আনন্দে শরীয়তের খেলাফ কোনো কিছু না ঘটে। জায়েযের মধ্যে আনন্দ-উৎসব করতে নিষেধ না করি। ঈদের আনন্দে আশপাশের গরিব প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখি। তাদের হাদিয়া তোহফা দিয়ে ঈদের আনন্দে শরীক করি।

ছোট্ট একটি ঘটনা, তাজমহল নির্মাণ শেষ হলে বাদশাহ শাহ জাহান শ্রমিকদের মাঝে খেজুর বিতরণ করলেন। অনেক শ্রমিক শুধু বাদশাহর একটু হাতের স্পর্শ পেয়ে ওখানেই বেহুশ হয়ে পড়ে। শুধু বাদশাহর হাতের একটু স্পর্শ! আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিজ হাতে তাঁর বান্দাদের রমযানের রোযার পুরস্কার দেবেন। সুবহানাল্লাহ কল্পনা করা যায়!

আল্লাহ পাক আমাদের নেক নিয়ত কবুল করুন। আমল করার তাওফীক দান করুন। এই রমযানই যেন হয় আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রমযান। আমীন।

লেখিকা : এমবিবিএস (ডিএমসি)

জেনারেল প্র্যাকটিশনার

 

 

advertisement