ইহসান ও দাম্পত্য জীবন
হযরত ডাক্তার মুহাম্মাদ আব্দুল হাই আরেফী রাহ. আমাদের যামানার ঐ সমস্ত আলোকিত মনীষীদের একজন ছিলেন, যারা সর্বপ্রকার প্রচার, যশ-খ্যাতি এড়িয়ে জীবন যাপন করছেন। কিন্তু তাদের জীবন ও কর্ম নিজে নিজেই মানুষের হৃদয়কে আকর্ষণ করেছে। তাদের মহান চরিত্রের সুবাসে পরিবেশ সুশোভিত হয়েছে। তিনি হযরত হাকীমুল উম্মত থানভী রাহ. এর তরবিয়ত ও সোহবতে ধন্য এবং তাঁর বিশিষ্ট খলীফা ও মুজায ছিলেন। ইসলাহপ্রত্যাশী বহু মানুষ নিজের আমল-আখলাকের সংশোধনের উদ্দেশ্যে হযরতের শরণাপন্ন হতেন। তাঁর হিদায়াত ও রাহনুমায়ীর আলোকে নিজেদের জীবনকে আলোকিত করতেন।
এক ভদ্রলোক একবার হযরতের নিকট আগমন করলেন। নিজের আমলী জিন্দেগীর বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর রহমতে হাদীসে বর্ণিত ‘ইহসান’ এর মাকাম আমার অর্জন হয়েছে।
হযরত ডাক্তার ছাহেব বিষয়টি শোনে খুশি হলেন, তাকে মোবারকবাদ জানালেন। বললেন, বাস্তবে ‘ইহসান’ আল্লাহ প্রদত্ত এক বড় নেয়ামত। এ নেয়ামত কারো হাসিল হলে এর জন্য দিল থেকে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা চাই। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ‘ইহসান’ এর এ মাকাম আপনার কেবল নামাযের ক্ষেত্রে হাসিল হয়েছে, নাকি স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও আপনার মধ্যে এ ইহসানের অনুভূতি বাকি থাকে। দৈনন্দিন জীবনে তাদের সাথে আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও কি আপনার হৃদয়ে এ অনুভূতি জাগ্রত থাকে যে, আল্লাহ অবশ্যই আমাকে দেখছেন।
ভদ্রলোক উত্তরে বললেন, হযরত! আমি তো শুনেছি, ‘ইহসান’ নামায ও অন্যান্য ইবাদতের সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। এজন্য নামাযের ক্ষেত্রে এ গুণটি অর্জনের অনুশীলন করেছি। আল্লাহ তাআলার ফযল ও করমে নামাযে তা অর্জনের ক্ষেত্রে কিছুটা সফলও হয়েছি। নামাযের বাইরে অন্যান্য মুআমালাতের ক্ষেত্রেও যে ইহসানের সম্পর্ক রয়েছে তা তো জানাই ছিল না। এ জন্য অন্যসব ক্ষেত্রে তা অর্জনের অনুশীলনের কথা কখনো চিন্তায়ও আসেনি।
হযরত ডাক্তার ছাহেব রাহ. বললেন, এ ভুল ধারণাটি দূর করার জন্যই আমি আপনাকে এ প্রশ্নটি করেছি। নামায ও অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে ইহসানের বিষয়টি তো কাক্সিক্ষতই যে, এ অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত থাকবে যে, আল্লাহ আমাকে দেখছেন। কিন্তু এ বিষয়টি শুধু নামাযের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। বরং জীবন চলার পথে মানুষের সাথে কৃত প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’ এ অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত থাকা প্রয়োজন। দাম্পত্য জীবনের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। কেননা স্বামী-স্ত্রী পরস্পর সম্পর্কটা খুবই বিস্তৃত। একজন আরেকজনের শ্বাস-প্রশ্বাস নির্গমনেরও সঙ্গী। এ দীর্ঘ সম্পর্কে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার হতে হয়। অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রীতিকর মুহূর্ত আসে। এসব নাজুক মুহূর্তগুলোতে নফস ও শয়তান মানুষকে বেইনসাফীর মুআমালায় তাড়িত করতে চায়। এজন্য এ সময়গুলোতে ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’ এ অনুভূতি হৃদয়ে জাগ্রত করা আরো অনেকগুণ বেশি প্রয়োজন। এ সময়গুলোতে হৃদয়ে এ বিশেষ অনুভূতি জাগ্রত না থাকলে পরিস্থিতিগুলো সাধারণত জুলুম ও পরস্পরের হক নষ্ট করার আকার ধারণ করে।
এরপর হযরত ডাক্তার ছাহেব রাহ. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ তো ছিল যে, পুরো জীন্দেগীতে উম্মাহাতুল মুমিনীনদের সাথে তাঁর স্বভাবজাত রাগ প্রদর্শন বা সাধারণ তিরস্কারের ঘটনাও ঘটেনি। আমি নিজেও সারা জীবন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ আদর্শ অনুসরণের চেষ্টা করেছি যে, আমি আমার পরিবার-পরিজনের উপর কখনো কোনো অবস্থায় রাগ দেখাব না। সুতরাং আমি আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে বলছি, স্ত্রীর সাথে জীবন চলার আজ আমার ৫১ বছর। এ দীর্ঘ পথ চলায় আলহামদুলিল্লাহ আমি তার সাথে কখনো সুর পরিবর্তন করেও কথা বলিনি।’
পরবর্তীতে একবার হযরত রাহ. এর সহধর্মিণী হযরতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিজেই উল্লেখ করেছেন, পুরো জীন্দেগীতে কখনো ডাক্তার ছাহেব আমার সাথে সুর পরিবর্তন করেও কথা বলেছেন বলে আমার মনে পড়ে না। কখনো সরাসরি আমাকে কোনো কাজের আদেশ করেছেন বলেও আমার স্মরণ নেই। আমি নিজ আগ্রহে তাঁর কাজ করে দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তিনি কখনো আমাকে কোনো কাজের কথা বলতেন না।
ডাক্তার ছাহেবের একথাগুলো আজ আমার এজন্য স্মরণ হয়েছে, গতদিন আমি ‘বিয়ের খুতবার বার্তা’ এর আলোচনায় একথা নিবেদন করেছিলাম, সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য তাকওয়া অপরিহার্য একটি গুণ। হযরত ডাক্তার ছাহেবের উপরিউক্ত গুণটি (যা বাতাসে ওড়া ও পানিতে জায়নামায বিছিয়ে নদী পার হওয়ার চেয়ে হাজার গুণ বড় কারামত) মূলত তাঁর তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওই বাণীটির বাস্তব চিত্র :
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ.
তোমাদের মধ্যে উত্তম লোক সেই, যে নিজের পরিবারের মহিলাদের কাছে উত্তম। —জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৮৯৫
নিঃসন্দেহে কুরআন মাজীদে পুরুষদেরকে মহিলাদের অভিভাবক বা নেগরান সাব্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের বাণী ও নিজের আমলী জিন্দেগী দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, অভিভাবক হওয়ার উদ্দেশ্য এই নয় যে, পুরুষ সবসময় স্ত্রীর উপর নিজের কতৃর্ত্ব খাটাবে। স্ত্রীর সাথে চাকরানির মতো আচরণ করবে। নিজের আমীরত্বের শিকলে তাকে শক্ত করে বেঁধে রাখবে। বাস্তবতা তো হচ্ছে, স্বয়ং কুরআনে কারীমেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে ভালোবাসা (বন্ধুত্ব) ও হৃদ্যতার সম্পর্ক বলে অভিহিত করা হয়েছে।—সূরা রুম : ২২
এছাড়া একই আয়াতে স্ত্রীকে স্বামীর প্রশান্তির উৎস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ জিনিসগুলো সামনে রেখে পর্যালোচনা করলে বিষয়টির খোলাসা দাঁড়ায় যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কটা মূলত ভালোবাসা-বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতার সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের শান্তি ও প্রশান্তির উৎস। তবে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে, সম্মিলিত কাজের ক্ষেত্রে কাজটি যথাযথ ও সুশৃঙ্খলভাবে আঞ্জাম দেয়ার সুবিধার্থে কাউকে আমীর নিযুক্ত করা। এমনকি ইসলামের দৃষ্টিতে দু ব্যক্তি একসাথে সফরে বের হলে উত্তম হলো, নিজেদের কোনো একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়া, চাই তারা পরস্পর বন্ধুই হোন না কেন। এক্ষেত্রে যাকে আমীর বানানো হয় তাকে এ জন্য আমীর বানানো হয় না যে, সে সারাক্ষণ অন্যদের উপর নিজের কতৃর্ত্ব খাটাবে, তাদেরকে বিভিন্ন আদেশ দিতে থাকবে। বরং তাকে আমীর বানানো হয় মূলত সফর সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালনের জন্য। তার কাজ হলো, সফরসঙ্গীদের খোঁজখবর নেয়া, তাদের আরাম ও নিরাপদ যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যদের করণীয় হলো, দায়িত্বগুলো আঞ্জামের ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করা, তার আনুগত্য করা।
ইসলাম যখন সাধারণ ও ক্ষুদ্র একটি সফরের জন্য এ শিক্ষা দিয়েছে তখন জীবনের দীর্ঘ সফর এ শিক্ষার বাইরে হবে কিভাবে? এ জন্যই ইসলামে স্বামী-স্ত্রী যখন জীবনের যৌথ সফর শুরু করে তখন দুজনের মধ্যে থেকে স্বামীকে এ দীর্ঘ সফরের আমীর বা নেগরান সাব্যস্ত করা হয়েছে। কেননা এ সফরের দায়িত্ব পালনের জন্য যে শারীরিক শক্তি ও অভ্যন্তরীণ গুণাবলির প্রয়োজন স্বভাবতই তা পুরুষের মধ্যে বেশি বিদ্যমান। কিন্তু ব্যবস্থাপনাগত এ দিকটির কারণে এ বাস্তবতা ম্লান হয়ে যায় না যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার মৌলিক সম্পর্কটা হচ্ছে, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতার। এবং তাদের দুজনের কারো এ অধিকার নেই যে, অপরজনের সাথে চাকর-চাকরানির মতো আচরণ করবেন। স্বামী তার ‘অভিভাবক’ এ মাকামের কারণে এ কথা মনে করবেন, স্ত্রীকে সৃষ্টিই করা হয়েছে তার প্রতিটি আদেশ-নিষেধ মান্য করার জন্য। অথবা স্ত্রী থেকে তার সব ধরনের বৈধ-অবৈধ ইচ্ছা পূরণের অধিকার রয়েছে। বরং আল্লাহ তাআলা স্বামীদেরকে যে শারীরিক শক্তি ও গুণাবলি দান করেছেন তার দাবি হচ্ছে, তিনি তার এ গুণাবলিকে শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে স্ত্রীর মন জয়ে ব্যয় করবেন। এবং স্ত্রীর বৈধ ইচ্ছা ও চাহিদা যথাসম্ভব পূর্ণ করবেন। এমনিভাবে আল্লাহ তাআলা স্ত্রীদের যে মাকাম ও যে অধিকার দান করেছেন তার দাবি হচ্ছে, তিনি আল্লাহ প্রদত্ত গুণাবালি তার জীবনসঙ্গীর সার্বিক সহযোগিতা এবং তাকে সন্তুষ্ট করার কাজে ব্যয় করবেন। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে যদি আল্লাহর তাওফীকে এমনটি করতে সক্ষম হন তাহলে সংসারটি তাদের জন্য শুধু দুনিয়ার জান্নাত হবে না; বরং এ কাজটি স্বতন্ত্র একটি ইবাদত বলে পরিগণিত হবে, যা আখেরাতের প্রকৃত জান্নাতের পাথেয়ও বটে। এ জন্যই হযরত ডাক্তার ছাহেব রাহ. বলেছেন, ইহসান শুধু নামাযের সাথে সম্পর্কিত বিষয় নয়; বরং দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ও আচার-আচরণের ক্ষেত্রেও ইহসানের বিষয়টি লক্ষণীয়।
লক্ষ করবেন, বিয়ের খুতবায় যে আয়াতগুলো পাঠ করা হয় সেগুলোতে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কুরআনে কারীমের অনেক আয়াত থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতৃর্ক বিয়ের খুতবায় বিশেষভাবে এ তিন আয়াত নির্বাচনে নিঃসন্দেহ বড় কোনো মাসলাহাত রয়েছে। ওই তিন আয়াতে সম্মিলিতভাবে যে কথাটি বিবৃত হয়েছে তা হচ্ছে, তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ। তিনটি আয়াতের প্রতিটিই শুরু হয়েছে, তাকওয়া অবলম্বন করো—এ নির্দেশ দ্বারা। কোনো নির্বোধ এ কথা বলতে পারে, বিয়ে-শাদির সাথে তাকওয়ার কী সম্পর্ক? কিন্তু যে ব্যক্তি বৈবাহিক জীবনের চড়াই-উতরাই ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে জ্ঞাত এবং যার দাম্পত্য জীবনের জটিলতাগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা রয়েছে সে নিশ্চিতভাবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হবে, সুখময় দাম্পত্য জীবন এবং স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হক যথাযথ আদায়ের জন্য তাকওয়া একটি অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। দাম্পত্য সম্পর্কটা খুবই স্পর্শকাতর একটি সম্পর্ক। স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেকের প্রকৃত স্বভাব, দুজনের মধ্যে লুক্কায়িত আবেগ-জযবা পরস্পরের সামনে এতটা খোলাখুলি বেরিয়ে আসে যে, দুনিয়ার অন্য কারো সামনে এভাবে খোলাখুলি আসে না। অন্যান্যদের সামনে ব্যক্তি তার মন্দ স্বভাব কৃত্রিম হাসির আড়ালে ঢেকে রাখতে পারে। নিজের ভেতরের মানুষটাকে কিছু সুন্দর শব্দ ও বাহ্যিক ভালো আচরণের আবরণে লুকিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু স্ত্রীর সাথে রাতদিনের চলাফেরায় এ আবরণ ধরে রাখা যায় না। কেনো না কোনো সময় কৃত্রিম ভদ্রতার খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে হয়। এখন যদি ভেতরের মানুষটা তাকওয়ার মহান গুণে সজ্জিত না হয় তাহলে সে তার সঙ্গীর জীবনটাকে দুর্বিষহ করে তুলবে। একজন স্ত্রীকে কোনো কোনো সময় স্বামী থেকে এমন সব কষ্ট সহ্য করতে হয় যা কোনো কোর্ট-আদালত পর্যন্ত নিষ্পত্তি করতে পারে না। কিছু কষ্ট এমন থাকে যা আদালত তো দূরের কথা নিজের একান্ত নিকটাত্মীয়ের সামনেও খুলে বলা সম্ভব হয় না। অনুরূপ কোনো কোনো স্বামীর স্ত্রীর ব্যাপারে এমন সব অভিযোগ থাকে যেগুলো থেকে নিষ্কৃতির না স্বামীর কাছে কোনো উপায় থাকে, আর না অন্য কারো কাছে। সে এর সমাধানের কোনো পথ খুঁজে পায়। পৃথিবীর কোনো শক্তি এ ধরনের জটিলতাগুলোর সমাধান দিতে পারে না। এ বিষয়গুলো সমাধানের পন্থা একটিই। তা হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে তাকওয়ার উপস্থিতি। অর্থাৎ প্রত্যেকে হৃদয়ে এ অনুভূতি লালন করবে, আমার সঙ্গী আল্লাহ তাআলার পক্ষে থেকে আমার কাছে আমানত। এ আমানতের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। জীবনসঙ্গীকে যেকোনো প্রকারের কষ্ট দিয়ে আমি দুনিয়াতে হয়তো জবাবদিহি থেকে বেঁচে যাব, তবে একদিন আমাকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। তার এ হকগুলো নষ্ট করার ফলাফল আমাকে একে একে ভোগ করতে হবে। হৃদয়ে এ অনুভূতি লালন করার নামই তাকওয়া। এটি এমন এক জিনিস যা স্বামী-স্ত্রীর নির্জন মুহূর্তগুলোতেও অন্তরে পাহারা ও নজরদারি ব্যবস্থা করে দেয়। যেখানে তাদের দেখার মতো কেউ থাকে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য হলো, নারী-পুরুষ জীবন সফরে একে অপরের সঙ্গী হওয়ার শুরুতেই যেন এই গায়েবী পাহারা ও নজরদারির ব্যবস্থা করে নেয়। যাতে তাদের পরস্পর ভালাবাসা ও মহব্বত স্থায়ী ও টেকসই হয়। ভালোবাসা কেবল নবজীবনের সাময়িক আবেগ ও আকর্ষণের ফলে সৃষ্ট কোনো ভালোবাসা না হয়, যা নতুন এ জীবনের উচ্ছলতা শেষ হওয়া সাথে সাথে নিঃশেষ হয়ে যায়। বরং ভালোবাসা হয় তাকওয়ার ছায়ায় বেড়ে ওঠা স্থায়ী ও টেকসই ভালোবাসা, যা স্বার্থহীনতা, কল্যাণকামিতা, আনুগত্য ইত্যাদি গুণাবালির দ্বারা সুসজ্জিত। এবং যা চোখের গণ্ডি পেরিয়ে হৃদয় গহিনে পৌঁছে যায়। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিয়ের খুতবায় এ তিনটি আয়াত নির্বাচন করেছেন, যার প্রতিটির সূচনা হয়েছে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে।
সূত্র : মাসিক আলবালাগ রবিউল আখির ১৪৪১ হিজরী
অনুবাদ : মাওলানা তাহের বিন মাহমুদ