বই পড়ব কীভাবে?
জ্ঞান আহরণের মৌলিক তিনটি মাধ্যম সম্পর্কে গত সংখ্যায় আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিটি মাধ্যমের কার্যকারিতা, উপকারিতা ও প্রভাব সম্পর্কেও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
জ্ঞান আহরণের ব্যাপক, বিস্তৃত ও বহুল ব্যবহৃত একটি মাধ্যম হল পাঠ বা অধ্যয়ন। আরও সহজ ভাষায়-বইপড়া। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মাধ্যমটি থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করলে আশা করা যায়, বইপড়ার যথার্থ ফায়দা লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
বই নির্বাচন
বইপড়া শুরু করার আগে প্রথম কাজ হল উপযোগী বিষয় ও মানসম্মত বই নির্বাচন করা। এক্ষেত্রে প্রত্যেক পাঠকের ব্যক্তিগত অবস্থা, অবস্থান, প্রয়োজন, যোগ্যতা ও আগ্রহ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করতে হয় সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাঠকের নিজের পক্ষে সম্ভব হয় না। অভিজ্ঞ ও হিতাকাক্সক্ষী কারো মাধ্যমে হলে যেমন সহজ হয়, তেমনি হয় উপকারী ও ফলপ্রসূ।
জীবন ও জগতকেন্দ্রিক নানা প্রয়োজন সামনে রেখে এবং নানা চিন্তা, মতবাদ ও মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যুগে যুগে রচিত হয়েছে অসংখ্য বই পুস্তক। তার মধ্যে উপকারী বই যেমন আছে তেমনি আছে ক্ষতিকর ও ভয়ানক ক্ষতিকর বিভিন্ন বই। আবার কোনো কোনো বই একজনের জন্য উপকারী বটে; আরেকজনের জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য বইকে ওষুধের সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেকে। অর্থাৎ উপকারী ও নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে উপকারী ওষুধ যেমন আছে, তেমনি আছে ক্ষতিকর ও নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য ক্ষতিকর বহু ওষুধ। কোনো সন্দেহ নেই, অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করলে যেমন কাক্সিক্ষত উপকার পাওয়া যায়, অনভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে কিংবা কোনো ধরনের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করলে দেখা দেয় ভয়ঙ্কর নানা ক্ষতি। এজন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়, ‘বই ও ওষুধ নির্বাচন করতে হয় অভিজ্ঞ ও হিতাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তির পরামর্শে।’
বইয়ের লেখক যদি ভালো হন, প্রাজ্ঞ হন, সুস্থ চিন্তা ও বিশুদ্ধ আকীদা-বিশ্বাসের অধিকারী হন; তাদের লেখা বই পড়তে প্রাথমিকভাবে কোনো বাধা নেই। তবে কখন কোন বই পড়ব এবং কোন অবস্থায় কোন ধরনের বিষয় নির্বাচন করব সেটার জন্য দরকার হবে অভিজ্ঞ হিতাকাঙ্ক্ষীর।
বিষয় নির্বাচন
শুধু বিষয়ের দিকটি বিবেচনা করে বলা যায়, কিছু কিছু বিষয় আছে এমন, যা প্রায় সবার জন্য এবং সর্বাবস্থায়ই উপকারী। যেমন : আখলাক ও ফিকির উন্নত করার বই, আদব ও শিষ্টাচার বিষয়ক রচনা, আমল ও ইবাদতের আগ্রহ সৃষ্টিকারী লেখা। এমনিভাবে সীরাতে রাসূল বা নবীজীবনী, সাহাবায়ে কেরামের ঘটনা ও জীবনচরিত, সালাফে সালিহীন বা নেককার পূর্বসূরীদের জীবনী বিষয়ক বই। এ জাতীয় বিষয় ও বই সব শ্রেণির পাঠককে প্রায় সর্বাবস্থায়ই উপকৃত করে। এগুলোর মাধ্যমে ঈমান তাজা হয়। আমলের আগ্রহ বাড়ে। আদব ও আখলাক এবং চিন্তা ও মানসিকতার উৎকর্ষ সাধন হয়।
পরবর্তী পর্যায়ের বিষয় হল, দৈনন্দিন জীবনযাপনের ক্ষেত্রে শরীয়তের বিভিন্ন বিধিবিধান। সহজ কথায়—মাসআলা-মাসায়েল বিষয়ক বই। এ বিষয়টির অনেকগুলো স্তর ও পর্যায় রয়েছে। জরুরি আকীদা ও ঈমানের আলোচনা, পাক পবিত্রতা ও অযু গোসলের বিধান, নামাযের সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত বিবরণ এবং রোযা, যাকাত ও হজ বিষয়ক আলোচনা। এমনিভাবে লেনদেন ও আচার-আচরণের ক্ষেত্রে শরীয়তের সুষ্ঠু নির্দেশনা। আল্লাহর হক, বান্দার হক, নিজের প্রতি নিজের দায়িত্ব এবং ইসলামের আবশ্যকীয় বিভিন্ন বিধান ও বিধানের সৌন্দর্য। তবে এজাতীয় বিষয়গুলো বই পড়ে শেখার চেয়ে অনেক বেশি সহজ হল, কোনো আলেমের কাছ থেকে সরাসরি শেখা। কিংবা দ্বীনদার বাবা-মায়ের কাছ থেকে জেনে নেওয়া। পরিবার ও আত্মীয় পরিজনদের মাঝে আলেম থাকলে তার কাছ থেকে বুঝে নেওয়া। তাদের কাছ থেকে বিষয়গুলো ধরে নেওয়ার পর তাদের নির্দেশে কিংবা তাদের তত্ত্বাবধানে নির্ভরযোগ্য বই থেকে পড়া।
সতর্কতা
আগেও বলেছি, বই নির্বাচনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি বিষয় হল লেখক। বিশুদ্ধ আকীদা, সুস্থ চিন্তা, উন্নত রুচি, মার্জিত স্বভাব ও প্রাজ্ঞ মন-মানসিকতার অধিকারী নির্ভরযোগ্য লেখকের নির্ভরযোগ্য বই নির্বাচন করতে হবে। এরপর উপযোগী পদ্ধতিতে সেটি অধ্যয়ন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারো সাথে অবশ্যই আলোচনা করতে হবে। জরুরি কোনো কথা অস্পষ্ট মনে হলে, কোনো বক্তব্যের ক্ষেত্রে দ্বিধা হলে, কোথাও কোনো ভুল বোঝার আশঙ্কা হলে, কোনো বিষয়ে অসংগতি দেখা গেলে এবং দ্বীন ও শরীয়তের সাথে কোনো বিষয়ে অসামঞ্জস্য মনে হলে অবশ্যই বিজ্ঞ আলেমে দ্বীনের সাথে কথা বলে নিতে হবে।
আদর্শ পাঠ
সুষ্ঠু, সুন্দর ও সম্ভ্রান্ত জীবন গঠনে বইয়ের ভূমিকা অনেক বেশি। তাই কোনো দক্ষ হাতের মুখলিস লেখক —আল্লাহর ইচ্ছায়— খুব সহজেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও জাতি গোষ্ঠীর মাঝে বিপুল পরিবর্তন আনতে পারেন।
সেজন্য লেখক ও বই নির্বাচনের পর করণীয় হল, যথানিয়মে বইটি অধ্যয়ন করা এবং ভাব ও বক্তব্যের ক্ষেত্রে লেখকের হৃদয় ও আবেগকে স্পর্শ করে পড়া। সেইসাথে নিজের জীবনের সাথে বইয়ের বক্তব্য মিলাতে থাকা।
শুধু পড়ে যাওয়া এবং শুধু পড়ার জন্য পড়া কখনো আদর্শ পাঠ ও প্রকৃত অধ্যয়ন হতে পারে না। পড়ার জন্য চাই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সুপরিকল্পিত টার্গেট। কেন বইটি আমি পড়ব এবং কোন বই থেকে মৌলিকভাবে কোন বিষয়গুলো অর্জন করব— এটা পরিষ্কার থাকা ভালো।
বুঝে বুঝে পড়া এবং শব্দ ও বাক্যের অন্তর্নিহিত মর্ম উপলব্ধি করা, সেইসাথে লেখকের হৃদয় ও চিন্তাকে স্পর্শ করতে পারার মতো পড়াকেই বলা যায় আদর্শ পাঠ। এই পাঠ মানুষের অনুভব অনুভূতিকে যেমন উন্নত করে, চিন্তা-চেতনাকেও করে সমৃদ্ধ ও পরিপুষ্ট। তাছাড়া লেখা থেকে লেখা শেখা এবং রচনা থেকে রচনা তৈরি করার যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রেও এমন পাঠ অত্যন্ত উপকারী হয়।
অনেক সময় দেখা যায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এবং বইয়ের পর বই পড়া হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সাধারণ বরং অতি সাধারণ শব্দের বানানও শুদ্ধ হচ্ছে না। বিশুদ্ধ বানানের ছবি কল্পনায় জায়গা করতে পারছে না। এমনকি পঠিত বইয়ের তালিকা লিখতে বললে বইয়ের নামের বানানে ভুল হচ্ছে। এমন ঘটনা অনেকের বেলায়ই দেখা যায়। তার অর্থ হল, সামান্যও খেয়াল করে পড়া হয়নি। শুধু পড়ার জন্য পড়া কিংবা শুধু গল্পটা বোঝার জন্য পড়া হয়েছে। কিংবা এ যুগের ভাষায় ‘সময় কাটানোর জন্য’ পড়া হয়েছে। তাতে পড়া এবং গল্প বোঝা হয়তো হয়েছে; এবং সময়ও হয়তো কেটেছে! কিন্তু সংগ্রহের ঝুলিতে তেমন কিছু জমা হয়নি।
বই হাতে নেওয়ার পর প্রথম কাজ
যে কোনো বই হাতে নেওয়ার পর প্রথম কাজ হল, বইটির পূর্ণ নাম খেয়াল করা। মূল নামের আগে-পরে পরিচিতিমূলক কিছু লেখা থাকলে সেটাও ভালভাবে খেয়াল করা। তাতে বইটির বিষয় সম্পর্কে প্রাথমিক একটা ধারণা হয়ে যাবে। বইটি পড়ার আগ্রহ বা বইটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছুটা অনুমান হবে।
বইয়ের লেখক পূর্বপরিচিত হলে তো ভালো। নয়তো লেখকের পরিচয় জানতে হবে। অনেক সময় লেখকের নামের সাথেই দুয়েক লাইনে পরিচয় লেখা থাকে। লেখকের পড়াশোনা বা কর্মস্থলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ থাকে। কখনোবা ভেতরের পাতায় কিংবা পাশের ফ্ল্যাপে সংক্ষিপ্ত ‘লেখক পরিচিতি’ থাকে। সেটা থেকেও কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। এসব না থাকলেও অনেক সময় বইয়ের পাতা উল্টে, বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু অংশ পড়ে অন্তত লেখকের আকীদা, চিন্তা ও যোগ্যতা সম্পর্কে কিছুটা অনুমান করা যায়।
উপরিউক্ত কোনো পন্থা অবলম্বনের সুযোগ না হলে অভিজ্ঞ ও আস্থাভাজন কারো মাধ্যমে লেখকের পরিচয় জানতে হবে। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূল বইয়ের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে থাকে লেখক। পাঠকের উপর বইয়ের চেয়েও অনেক বেশি প্রভাব পড়ে লেখকের। এটা এমন এক বাস্তবতা, যা দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ছাড়া অনুধাবন করা প্রায় অসম্ভব।
দ্বিতীয় কাজ
বইয়ের নাম ও লেখকের নাম-পরিচয় জানার পর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সূচিপত্র দেখা। প্রধান শিরোনাম ও শাখা শিরোনামগুলো মোটামুটি পড়ে নেওয়া। তাতে আশা করা যায়, পুরো বইয়ে কোন কোন বিষয়ে কী ধরনের আলোচনা রয়েছে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা হবে। সেই সাথে বইটি থেকে উপকৃত হওয়ার দিক ও প্রয়োজনীয়তা অনুমান করা যাবে।
এরপর পড়া যেতে পারে লেখকের ভূমিকা। তাতে বইটি লেখার কারণ, প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে লেখকের চিন্তা ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা হবে। সেই সাথে লেখকের সঙ্গে একটা যোগসূত্র তৈরি হবে। যে কোনো বই থেকে উপকৃত হওয়ার ক্ষেত্রে এই যোগসূত্রের অনেক প্রভাব থাকে।
লেখকের ভূমিকার পর অন্য কারো ভূমিকা ও প্রকাশকের কথা থাকলে সেটাও পড়ে নেওয়া ভালো।
এই কাজগুলো করার পর আসে বইপড়ার পর্ব।
পাঠপদ্ধতি
বিষয় ও প্রসঙ্গের বিচারে হাজারো রকমের বই রয়েছে। তার মাঝে রয়েছে উপস্থাপন ও রচনাশৈলির বৈচিত্র্য। রয়েছে সহজতা ও কঠিনতার হিসাব এবং সংক্ষিপ্ততা ও বিস্তারিতের পার্থক্য। নিয়মিত পড়তে থাকলে এজাতীয় বৈচিত্র্য ও পার্থক্য খুব সহজেই মসৃণ হয়ে যায় প্রায় প্রত্যেক পাঠকের কাছে। তবু বলা যায়, প্রতিটি বই তার উপযোগী নিয়মে পড়তে পারলেই সর্বোচ্চ ফায়দা লাভের আশা করা যায়।
এখানে আমরা বইপড়ার প্রাথমিক কিছু নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করতে পারি।
কোনো একটি বই হাতে নেওয়ার পর মূল বিবেচনার বিষয় থাকে দুটি :
এক. বইয়ের বিষয়।
দুই. নিজের সময় ও সুযোগ এবং কাক্সিক্ষত বই থেকে উপকৃত হওয়ার লক্ষ্য ও টার্গেট।
অর্থাৎ যে বইটি আমি পড়তে চাচ্ছি সেটি হতে পারে কুরআনের তরজমা, কুরআনের তাফসীর, হাদীসের অনুবাদ, হাদীসের ব্যাখ্যা, সীরাতে নববী, মনীষীদের জীবনী, নসীহতমূলক বই, জীবনযাপনের আদব ও শিষ্টাচার বিষয়ক রচনা, গল্পের বই, ইতিহাসের বই, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক বই, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানকেন্দ্রিক বিষয়ের বই এবং এজাতীয় আরও বিভিন্ন বিষয়ের বই। অতএব বইটির বিষয় ও প্রকার এবং রচনার ধারা ও শৈলীর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে প্রথমে। সেই সাথে লেখকের ব্যক্তিত্ব ও তার রচনাশৈলী সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করতে হবে। কারণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে বইয়ের বিষয়টিই হয়ে থাকে সহজ। সেক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিকভাবেই বইটি পড়া যায় এবং যথেষ্ট পরিমাণে উপকৃত হওয়া যায়। আবার কোনো কোনো বিষয় মূলবিষয় হিসেবেই হয়ে থাকে খুব কঠিন। সেক্ষেত্রে গভীর মনোযোগ দিয়ে এবং তুলনামূলক বেশি সময় ব্যয় করে পড়তে হয়। তবে এমনও হয় যে, বিষয়টি সহজ। তবে লেখক সেটিকে খুব সহজে উপস্থাপন করতে পারেননি। কিংবা বিষয়টি যথেষ্ট কঠিন। তবে লেখক অতি সহজেই তা ফুটিয়ে তুলেছেন। এসব বিবেচনা করে পাঠককে প্রস্তুতি নিতে হয় এবং উপযুক্ত সময় ও মনোযোগ ব্যয় করে পড়তে হয়। তাহলে কাক্সিক্ষত ফায়দা লাভের দৃঢ় আশা করা যায়।
আবার কোনো কোনো বিষয় এমন হয়ে থাকে, যা থেকে সর্বোচ্চ ফায়দা লাভের জন্য প্রথমে নিজে পড়ে অন্যদের সাথে তাকরার বা আলোচনা করতে হয়। কিংবা সম্মিলিত পাঠ বা গ্রুপস্টাডির মাধ্যমে বিষয়টি আত্মস্থ করতে হয়। এছাড়াও কোনো বই থেকে সহজে উপকৃত হওয়ার মাধ্যম হয়ে থাকে মুযাকারা বা পারস্পরিক আলোচনা।
উদাহরণস্বরূপ গল্পের বই থেকে উপকৃত হওয়া তুলনামূলক সহজ। উপরন্তু যদি গল্পটি হয় জীবনঘনিষ্ঠ, উপাখ্যান ধারার। এধরনের বই শুধু পড়ে গেলেও মূল বিষয়টি জানা হয়ে যায়। মূল ঘটনা ও গল্পটি বোঝার জন্য খুব গভীর মনোযোগের প্রয়োজন পড়ে না। সেইসাথে যথেষ্ট কম সময়ের মধ্যেই এজাতীয় বই পড়ে নেয়া যায়। পক্ষান্তরে ইতিহাস বিষয়ক বই তারচে আরেকটু বেশি সময় ও মনোযোগ দাবি করে। এমনিভাবে নসীহতমূলক বই, সীরাত বিষয়ক বই ও মনীষীদের জীবনচরিত বিষয়ক রচনা তুলনামূলক কম সময়ে পড়া যায়। আদব ও শিষ্টাচার বিষয়ক বই তার চেয়ে একটু বেশি সময় দাবি করে। হাদীসের ব্যাখ্যা, হাদীসের অনুবাদ, কুরআনের তাফসীর এবং কুরআন তরজমা ইত্যাদি অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ও গভীর মনোযোগ দাবি করে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আশা করি, বিষয় বিবেচনায় বই পড়ার মেহনত ও মনোযোগ বিষয়ে প্রাথমিক একটা ধারণা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
নিজের সময় ও সুযোগ এবং কাক্সিক্ষত বই থেকে উপকৃত হওয়ার লক্ষ্য ও টার্গেট হিসেবে বই পড়ার মৌলিক কয়েকটি পদ্ধতি হতে পারে :
১. নজর বুলানো পাঠ
অর্থাৎ অতি অল্প সময়ে নির্দিষ্ট কোনো বই সম্পর্কে প্রাথমিক কিছু ধারণা ও পরিচিতি লাভ করা। অথবা বইটি পূর্ব পরিচিত হয়ে থাকলে বিভিন্ন পৃষ্ঠা থেকে দুয়েকটি তথ্য, বাণী ও বক্তব্য দেখে নেওয়া।
২. সংক্ষিপ্ত পাঠ
কোনো বইয়ের সূচিপত্র দেখে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিরোনাম বের করা। সেখান থেকে পুরো আলোচনা কিংবা উল্লেখযোগ্য একটি অংশ পাঠ করা। এভাবে বিভিন্ন শিরোনাম ও আলোচনা পড়ে পুরো বই সম্পর্কে মৌলিক ধারণা লাভ করা এবং সংক্ষেপে কিছু জরুরি ফায়দা হাসিল করা।
৩. অংশবিশেষ পাঠ
কয়েক-খণ্ডবিশিষ্ট অথবা এক-খণ্ডবিশিষ্ট বড় কোনো বই হাতে নেওয়ার পর নির্দিষ্ট প্রয়োজনে কাক্সিক্ষত কোনো অধ্যায় পাঠ করা। অথবা সময়ের স্বল্পতাহেতু সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় বা উল্লেখযোগ্য দুয়েকটি অধ্যায় পড়ে নেওয়া। তাতে বইটির আলোচনা, আঙ্গিক ও পঠিত বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ও বক্তব্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ হয়। পরবর্তীতেও বইটি থেকে উপকৃত হওয়ার পথ সুগম হয়।
৪. পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত পাঠ
চতুর্থ এই প্রকারটিকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করতে পারি :
ক. সাধারণ পাঠ।
খ. বিশ্লেষণমূলক পাঠ।
গ. পর্যালোচনামূলক পাঠ।
ঘ. সম্পাদনামূলক পাঠ।
আগামী সংখ্যায় এই প্রকারগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন। আমীন।