মেয়েটির দুনিয়াবিমুখতা
জনা কয়েক এতিম সন্তান নিয়ে হাম্মাদ ইবনে সালামাহ রাহ.-এর ঘরের পাশে বসবাস করতেন দ্বীনদার এক মহিলা। হাম্মাদ ইবনে সালামা রাহ. বলেন, একদিন প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছিল। চালের পানি চুইয়ে মহিলাটির ঘর ভেসে যাচ্ছিল। করুণ কণ্ঠে মহিলা ডাকতে থাকল, ‘দয়াময়, একটু দয়া করো আমাদের প্রতি!’
হাম্মাদ ইবনে সালামা বলেন, বৃষ্টি যখন থামল, একটি থলেতে ১০টি স্বর্ণমুদ্রা ভরে আমি তাঁর ঘরের দিকে রওয়ানা হলাম। দরজার যখন কড়া নাড়লাম, মহিলা বলল, ‘আল্লাহ্, এ যেন হাম্মাদ ইবনে সালামা হয়!’
আমি বললাম, হাঁ, আমিই হাম্মাদ ইবনে সালামাই! বৃষ্টির সময় তোমার আর্তচিৎকার শুনতে পেয়েছি। তুমি বলছিলে, ‘হে দয়ালু, আমার প্রতি দয়া করো!’ তাঁর কোনো দয়া কি তোমার কাছে এসেছে?
মহিলা বলল, বৃষ্টি থেমে গেল। বাচ্চারা রোদ পোহাল। ঘরও শুকাল।
আমি স্বর্ণমুদ্রার থলেটি মহিলার দিকে বাড়ালাম। বললাম, এগুলো রাখো, কাজে লাগবে!
এমন সময় ছেঁড়াফাটা পশমের পোশাক পরিহিত ছোট একটি মেয়ে ভেতর থেকে বেরিয়ে এল। সে আমাকে বলল, ‘হাম্মাদ! আপনি দয়া করে চুপ করুন! আপনি কি আমাদের আর আমাদের প্রভুর মাঝে বাধ সাধতে চাচ্ছেন!?
তারপর তার মাকে বলল, আম্মু! আমরা প্রভুর কাছে যে শেকায়াত করেছিলাম, তিনি বুঝি নাখোশ হয়েছেন! তাই তিনি আমাদের কাছে দুনিয়া পাঠাচ্ছেন। তার দুয়ার থেকে আমাদের তাড়িয়ে দেয়ার জন্য!
এরপর মেয়েটি একেবারে মাটিতে লুটে পড়ল। চেহারা মাটিতে লাগিয়ে বলতে লাগল, মাওলা, আপনার ইজ্জতের কসম, যতই তাড়িয়ে দেন, আমরা আপনার দুয়ার থেকে একটুও সরব না!
আর আমাকে বলল, ‘হাম্মাদ, আপনার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে আপনি চলে যান! যেখান থেকে এনেছেন সেখানে নিয়ে যান! আমাদের প্রয়োজন কেবল ওই সত্তার কাছেই আমরা পেশ করব যিনি জগতের কাউকে ভয় পান না!’
—উয়ূনুল হিকায়াত, ইবনুল জাওযী : ১৮১
শিক্ষা
এক. বিপদের সময় আল্লাহর সাহায্য চাইতে হয়।
দুই. বিপদ-আপদে প্রতিবেশীর খবরাখবর রাখতে হয় এবং পাশে দাঁড়াতে হয়।
তিন. বিপদ যখন সরে যায়, আল্লাহর নিআমতের অনুভূতি জাগ্রত করতে হয়।
চার. অন্যের সাহায্য না নিয়ে থাকা যদি সম্ভব হয় তাহলে যথাসম্ভব বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। সেই সঙ্গে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং নিজে পরিশ্রম করে প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করা।