আমি জীবনের সবকিছুতেই অনুভব করি বরকতের ছোঁয়া
‘মাঝে মাঝে আমার খুব দুঃখ হয়। কারণ একজন মুসলিম মেয়ে হিসেবে আমার জন্ম হয়নি। তাহলে আমার সারাটি জীবন মুসলিম হয়ে কাটত। মুসলমান হিসেবে যাদের জন্ম হয়েছে তাদের প্রতি আমার খুব ঈর্ষা হয়। আর যারা এত বড় নিআমতের কদর করে না খুব দুঃখ হয় তাদের প্রতি’। কথাগুলো বলছিলেন খ্রিস্টান ধর্ম থেকে মুসলমান হওয়া হুদা জর্জ।
কীভাবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন সেই গল্পটা শুনুন তার মুখেই। আমার বাবা ছিল প্রোটেস্ট্যান্ট আর মা ক্যাথলিক। ধর্মের সাথে বাবার তেমন কোনো সম্পর্ক না থাকলেও মা সবসময় চেষ্টা করতেন ক্যাথলিক ধর্ম বিশ্বাসে আমাদের বড় করতে। ছোটকাল থেকেই আমি ছিলাম গির্জার একজন সক্রিয় সদস্য। যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তাম তখন প্রার্থনার সময় ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনা করতাম আমি। আর নাইনে উঠার পর রবিবারের সাপ্তাহিক ধর্মক্লাসের যাজকের স্ত্রীর সহযোগী হয়ে উঠি। একবার স্কুলে আমরা চার বান্ধবী মিলে একটা ক্যাথলিক ছাত্রী সংস্থা গড়ে তুলেছিলাম। কেন আমাদের মহান দয়াময় প্রভু মানুষের পাপ ক্ষমা করার জন্য যীশুকে শূলিতে চড়িয়েছেন? কেন পিতা আদমের ভুলের কারণে আমরা সবাই পাপী হয়ে জন্মগ্রহণ করি? কেন বাইবেলের বিভিন্ন বক্তব্য বিজ্ঞানের সাথে মেলে না? যীশু কীভাবে আমাদের প্রভু হন? আবার ভিন্ন ভিন্ন তিন প্রভু মিলে এক প্রভুতে পরিণত হয়! এ প্রশ্নগুলো আমাদের অনেক ভাবাত।
বান্ধবীদের সাথে একসাথে হলেও এগুলো নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনা করতাম। কিন্তু কখনো এগুলোর কোনো উত্তর পাইনি। গির্জাও আমাদের কখনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। তারা শুধু বলত, এ বিষয়গুলো শুধু বিশ্বাস করে নাও।
আমার যখন ১৪ বছর তখন সর্বপ্রথম আমি একটা কাজ পাই। বেতন থেকে ২৫ ডলার করে একটি সেবা সংস্থায় নিয়মিত দান করতাম। এই অর্থগুলো অসহায় শিশুদের কল্যাণে ব্যয় করা হত। যে সকল শিশুদের পেছনে অর্থ ব্যয় হত তাদের সাথে মার্কিন দাতাদের যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেয়া হত সংস্থার পক্ষ থেকে। আমার পড়াশোনার শেষের চার বছরে টাকাগুলো যেত শরীফ নামে এক মিশরীয় শিশুর কাছে। তার সাথে চিঠির আদানপ্রদানও হত আমার। শরীফের ছিল দুই ভাই আর আমার বয়সি এক বোন। ওদের মা অসুস্থ থাকায় তিনি কোনো কাজ করতে পারতেন না। মনে পড়ে শরীফ একবার তার বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমাকে চিঠি পাঠিয়েছিল। চিঠিটি পেয়ে আমি অবাক হয়ে ভেবেছিলাম, মেয়েটি তো আমার সমবয়সি অথচ তার বিয়ে হয়ে গেল। ব্যাপারটি অনেক অবাক লেগেছিল আমার কাছে। মুসলমানদের সাথে আমার সম্পর্কের সূচনা এভাবেই হয়েছে।
অভিবাসী নারীদের ইংরেজি শেখানো উপলক্ষ্যে সম্পর্কের দ্বিতীয় সূচনা হয়েছে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোতে। আমার ক্লাসে ফাতেমা ও মাইসুন নামে দুজন বিধবা মহিলা ছিল। তারা ভিয়েতনাম থেকে আগত। পরবর্তীতে কিছু অভিবাসী শিক্ষার্থীদের সাথে ইংলিশ স্পোকেন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে হত আমাকে। আমার গ্রæপে থাকত পাঁচজন শিক্ষার্থী। সেখানে ফারেস নামের এক ফিলিস্তিনী যুবকও ছিল। সপ্তাহে দুইদিন ইংলিশ স্পোকেন-এর অনুশীলনের জন্য আমরা একত্রিত হতাম। তখন প্রত্যেকে নিজেদের পরিবার, পড়াশোনা, শৈশব ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করত। ফারেস যখন তার জীবন, তার পরিবার ও ধর্ম সম্পর্কে কথা বলত তখন আমার হৃদয়ে টান অনুভব করতাম। মনে পড়ে যেত শরীফ ফাতেমা ও মাইসুনের কথা। ধর্মবিশ্বাসে এরা সবাই ছিল আমার থেকে ভিন্ন। তাদের সভ্যতা-সংস্কৃতিও মিলত না আমার সভ্যতা-সংস্কৃতির সাথে। তাই কখনো তাদের ধর্ম, সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীরভাবে জানার আগ্রহ অনুভব করিনি নিজের মাঝে। তবে এরপর আমি ইসলাম সম্পর্কে যত জানতে থাকলাম ততই এ বিষয়ে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকল। মনে হত আমি যেন আমার জীবনের পথ খুঁজে পাচ্ছি।
ভার্সিটিতে পড়াশোনার সময় তুলনামূলক ধর্মতত্ত¡ সাবজেক্টে আমি ইসলামকে বেছে নিয়েছিলাম। তখন যীশুখ্রিস্ট সম্পর্কে শৈশবের সেই প্রশ্নগুলো আমার মনে আবার ঘুরপাক খেতে লাগল। ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করে আমি আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছিলাম। আমি জানতে পেরেছিলাম, পিতা আদম-এর ভুলের কারণে আমাদের কোনো শাস্তি দেয়া হয়নি। কারণ আদম ক্ষমাশীল মহান প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। দয়াময় প্রভুও তাঁকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তাই আদমের ভুলের কারণে কাফফারা হিসেবে যীশুর প্রাণদানের কোনো প্রয়োজন ছিল না। আর যীশুও আমাদের প্রভু নন। তিনি অন্যান্য রাসূলের মতো একজন রাসূল, যারা সর্বদা মানুষকে তাওহীদ ও আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন। এ সবকিছুই ইসলাম ধর্মের কথা। আর আমার কাছে মনে হয়েছে এভাবে সবকিছুকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। এটা যেমন যুক্তিসম্মত তেমনই হৃদয়ের জন্যও প্রশান্তিদায়ক। আমার কাছে মনে হয়েছিল, এতদিন আমি যা খুঁজছিলাম সেটা যেন আমি খুঁজে পেয়েছি।
বাড়ি ফিরে ইসলাম সম্পর্কে আমার পড়াশোনা আরো চালিয়ে গেলাম। লাইব্রেরিতে থাকা বেশ কয়েকটি বই পড়ে ফেললাম এ সংক্রান্ত। একদিন এ নিয়ে আলোচনাও করলাম বন্ধুদের সাথে। দেখলাম তারাও আমার মতো ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করছে। আমি অচিরেই যে নতুন ধর্মবিশ্বাস গ্রহণ করতে যাচ্ছিলাম এ ব্যাপারে তাদের সমর্থন থাকলেও প্রশ্ন তুলেছিল, আমার মতো ক্যালিফোর্নিয়ার একজন স্বাধীনচেতা নারীর জীবনে ইসলাম গ্রহণের সুদূরপ্রসারী প্রভাব কেমন হবে। আমার পরিবারই-বা ব্যাপারটা কীভাবে গ্রহণ করবে।
আমি আমার আশপাশে কোনো ইসলামিক সেন্টার খুঁজছিলাম, কিন্তু সবচেয়ে কাছের যে ইসলামিক সেন্টার অবস্থিত তা ছিল সানফ্রানসিসকোতে, যা আমাদের এখান থেকে অনেক দূরে। ওই এলাকায় যাওয়ার গাড়িগুলো ছাড়ার সময় আমার কাজের সময়ের সাথে মিলছিল না। তাই একাই চালিয়ে যেতে লাগলাম আমার গবেষণা।
মনে পড়ে, পরিবারের সবাই মিলে একবার আমরা শিক্ষামূলক একটা প্রোগ্রাম দেখছিলাম। এস্কিমো জাতির জীবনাচার ও সভ্যতা সংস্কৃতি নিয়ে ছিল প্রোগ্রামটি। সেখানে বলা হয়েছিল, বরফের জন্য তাদের ভাষায় ২০০ টি শব্দের ব্যবহার রয়েছে। কারণ তাদের জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে বরফ। এরপর একদিন আমরা আলোচনা করছিলাম পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো প্রকাশ করার জন্য কী বিপুল পরিমাণ শব্দ ব্যবহার করে। তখন বাবা বললেন, ব্যাপারটা সত্যিই তাই। যেমন দেখো, আমেরিকানরা ‘মুদ্রা’র জন্য কতগুলো শব্দ ব্যবহার করে। আমি তখন বললাম, মুসলমানদের নিকট আল্লাহর ৯৯ টি নাম রয়েছে। যার দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
গ্রীষ্মের শেষেই আমি আমার ভার্সিটিতে ফিরে যাই। ভার্সিটিতে গিয়েই সর্বপ্রথম যোগাযোগ করি পোর্টল্যান্ডের মসজিদে। আমি তাদের অনুরোধ করি, ইসলাম বিষয়ে কথা বলার জন্য তারা যেন আমাকে কোনো মহিলার সন্ধান দেন। তারা একজন মুসলিম মহিলার সন্ধান দিলে সেই সপ্তাহে আমি তার সাথে সাক্ষাৎ করি। আলাপচারিতায় আমি বুঝতে পারি, সত্যিকার অর্থেই আমি একজন মুমিনের বিশ্বাস লালন করছি। তখন তাকে বললাম, ইসলাম সত্যধর্ম হওয়া নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আমি শুধু এমন কাউকে খুঁজছি, যিনি আমাকে ইসলামের মৌলিক আমলগুলো শিখিয়ে দেবেন। যেমন আমি কীভাবে নামায পড়ব ইত্যাদি। কারণ এ বিষয়গুলো আমি বিভিন্ন বইয়ে পড়লেও শুধু বই পড়ে আমার পক্ষে সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়।
এ বোনটি এক নবজাতকের আকীকার অনুষ্ঠানে শরিক হওয়ার জন্য সেই রাতে আমাকে দাওয়াত দেন। আন্তরিকতার সাথেই আমি সে দাওয়াত গ্রহণ করি। অনুষ্ঠানে অনেক মুসলিম মহিলা এসেছিল। আমার সাথে তাদের সবার আচরণ ছিল উষ্ণ ভালবাসা ও হৃদ্যতাপূর্ণ। যেন তারা সবাই আমার অনেক দিনের পুরোনো বান্ধবী। অনুষ্ঠানে সবার সামনে আমি কালিমা পাঠ করি। আমার ইসলাম গ্রহণে তারা অনেক আনন্দিত হয়। এরপর তারা শিখিয়ে দেয়, কীভাবে আমাকে নামায পড়তে হবে। সে সকল মহিলারা তাদের ঈমান আনার গল্প আমার সাথে করতে থাকে। দেখলাম তাদের অনেকেই আমার মতো ঈমান আনা মার্কিন নওমুসলিম। অনুষ্ঠান শেষে যখন আমি চলে আসছিলাম তখন মনে হচ্ছিল আমি যেন নবজন্ম লাভ করেছি। নতুন করে আমার জীবনের পথচলা শুরু করতে যাচ্ছি।
হিজাব পরব কি পরব না তা নিয়ে আমি দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ছিলাম। আমার খুব ভয় লাগছিল এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে। প্রথমে আমি ওড়না পরা শুরু করি। সাধারণত আমি ওড়নাটা শুধু আমার কাঁধে ঝুলিয়ে রাখতাম। একদিন আমাকে একজন বলেন, ওড়না শুধু কাঁধে নয় মাথায়ও রাখতে হবে।
আমি হিজাব ভালবাসতাম। হিজাব পরা নারীদের দেখে মুগ্ধ হতাম। কারণ তারা সবাই ছিল সভ্য ভদ্র ও তাকওয়ার গুণের অধিকারী। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ হিজাব পরার মতো শক্তিশালী মনোবল আমার ছিল না। কারণ আমি জানতাম, হিজাব পরা শুরু করলেই আশপাশের লোকজন আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু করবে। সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার শক্তি আমার নেই। এই দোদুল্যমানতার মধ্যে রমযান চলে এল। রমযান মাসে আমি প্রবল আত্মিক শক্তি অনুভব করি। এ সময় অনেক বড় পরিবর্তন এল আমার জীবনাচারে। রমযানের প্রথম দিন থেকে আমি ভার্সিটিতে হিজাব পরে যাওয়া শুরু করলাম। আলহামদু লিল্লাহ আজ পর্যন্ত আর কখনো হিজাব ছাড়িনি। মুসলিম হিসেবে আমি এখন গর্ববোধ করি। অনুভব করি, এখন যে কাউকে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব।
ইসলাম গ্রহণের পরপরই আমার পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। এতে তারা অবাক হয়নি। কারণ ইসলাম সম্পর্কে আমার আগ্রহ ও উৎসাহ দেখে তারা আগেই ধারণা করেছিল এমন কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তাই আমার এই সিদ্ধান্তকে তারা স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছিল। তবে আমি যখন হিজাব পরা শুরু করি তখন তারা নিজেদের উৎকণ্ঠা ও বিরক্তিভাব প্রকাশ করে। তারা আশঙ্কা করছিল যে, হিজাব হয়তো আমাকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। যখন কোনো পাবলিক প্লেসে হিজাব পরিহিত অবস্থায় আমি তাদের সাথে থাকব তখন তারা খুবই বিব্রত বোধ করবে। তাদের ধারণায় এটা সাংঘাতিক মৌলবাদী আচরণ। আমি ভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস গ্রহণ করেছি এটা তাদের কাছে তেমন কোনো সমস্যার বিষয় ছিল না। তবে সে ধর্মবিশ্বাস আমার বাহ্যিক আচরণ ও পোশাক-আশাকে কোনো পরিবর্তন আনবে— তা তারা চাচ্ছিল না। সেইসাথে তাদের আশঙ্কা ছিল যে, হিজাব আমার জীবনের স্বপ্ন পূরণে অনেক বড় বাধা হতে পারে। তবে আমার পরিবার চূড়ান্ত ধাক্কা খেয়েছিল যখন তারা জানতে পারে, আমি একজন মুসলিম যুবককে বিয়ে করতে যাচ্ছি। ইংলিশ স্পোকেন ক্লাসের গ্রুপ-সদস্য ফারেসকে আমি বিয়ে করতে যাচ্ছিলাম। মূলত ফারেসের কারণে সর্বপ্রথম আমার ভেতর ইসলামের প্রতি আগ্রহ জেগেছিল। ইসলাম গ্রহণের দ্বিতীয় বছরই আমি তাকে বিয়ে করি। এতে প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়েছিল আমার পরিবার। কারণ হিজাব নিয়ে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতি সামলে ওঠার আগেই আমি যেন তাদের ঘাড়ে আরেকটি বোঝা চাপিয়ে দিয়েছি। আমার বাবা-মা আশঙ্কা করছিলেন, বিয়ের কারণে আমি অল্প বয়সে মা হয়ে যাব। এতে আমার ভবিষ্যৎ জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
প্রথম প্রথম আমার বাবা-মা ফারেসকে খুব সন্দেহের চোখে দেখছিল। তারা ধারণা করেছিল, হয়তো গ্রীন কার্ড পাওয়ার লোভে ফারেস আমাকে বিয়ে করেছে। বিয়ের পর পর পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল খুবই তিক্ত। মনে হয়েছিল, তাদের সাথে আমার সম্পর্ক আর কখনো স্বাভাবিক হবে না। তবে এরপর জীবনের অনেক কিছুই ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে।
আমার স্বামী ফারেস ভার্জিনিয়ায় চলে যায় ভার্সিটিতে পড়ার জন্য। সেখানে আমরা এক মুসলিম কমিউনিটিতে ছিলাম। আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিল খুবই চমৎকার। আর আমিও শিশু উন্নয়ন বিভাগে ভালো ফলাফল করে আমার পড়াশোনা শেষ করেছি। পড়াশোনা শেষ করে বেশ কয়েকটি চাকরি আমি করেছি। আর সত্যি কথা হল, হিজাব পরার কারণে কোথাও আমাকে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি। সমাজসেবায় আমার আগ্রহ ছিল ছোটকাল থেকেই। তাই বেশ কিছু সমাজসেবামূলক কাজের সাথে আমি জড়িত। আমি এখন আরবী ভাষা ভালোভাবে রপ্ত করার চেষ্টা করছি।
এ বছর আমরা দুইবার আমার পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। আমার বাবা-মা সর্বপ্রথম এই গ্রীষ্মে আমাদের সাথে দেখা করেন। আমাদেরকে অনেক সুন্দর ও দামি উপহার দেন। পরিবারের সাথে এখন আমার সম্পর্ক অনেক ভালো। আমার জীবনের সবকিছুই পরিবারের সামনে ছিল। তারা বুঝতে পেরেছে, ইসলাম গ্রহণের কারণে আমার জীবন ধ্বংস হয়ে যায়নি। দুঃখ-কষ্ট নয় ইসলাম আমার জীবনে এনে দিয়েছে সুখ আর শান্তি। আমার জীবনের সার্বিক সফলতা নিয়ে তারা এখন খুবই গর্বিত। আর সেইসাথে এটা দেখে আনন্দিত যে, আমি কত সুখে ও শান্তিতে জীবনযাপন করছি। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করছি, তিনি আমাকে হেদায়েত দান করেছেন। তাঁর তাওফীকেই আমি ইসলাম গ্রহণ করতে পেরেছি। এখন আমি জীবনের সবকিছুতেই অনুভব করি বরকতের ছোঁয়া।
আমার কাছে মনে হয়, আমার অতীত জীবনের অংশগুলো পরস্পরে জুড়ে আছে, যেন পূর্ণাঙ্গ একটি চিত্র তৈরি করে। যে চিত্র আমার ইসলামের পথে পরিচালিত হওয়ার পূর্ণ বিবরণ দেয়—
قُلْ اَنَدْعُوْا مِنْ دُوْنِ اللهِ مَا لَا یَنْفَعُنَا وَلَا یَضُرُّنَا وَ نُرَدُّ عَلٰۤی اَعْقَابِنَا بَعْدَ اِذْ هَدٰىنَا اللهُ کَالَّذِی اسْتَهْوَتْهُ الشَّیٰطِیْنُ فِی الْاَرْضِ حَیْرَانَ ۪ لَهٗۤ اَصْحٰبٌ یَّدْعُوْنَهٗۤ اِلَی الْهُدَی ائْتِنَا ؕ قُلْ اِنَّ هُدَی اللهِ هُوَ الْهُدٰی ؕ وَ اُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعٰلَمِیْنَ.
(হে নবী! তাদেরকে) বল, আমরা কি আল্লাহকে ছেড়ে এমন সব জিনিসের ইবাদত করব, যারা আমাদের কোনো উপকারও করতে পারে না এবং কোনো অপকারও করতে পারে না? আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত দেয়ার পর আমরা কি সেই ব্যক্তির মতো উল্টো দিকে ফিরে যাব, যাকে শয়তান ধোঁকা দিয়ে মরুভূমিতে নিয়ে গেছে, ফলে সে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়? তার কিছু সঙ্গী আছে, যারা তাকে হেদায়েতের দিকে ডাক দেয় যে, আমাদের কাছে এসো। বল, আল্লাহপ্রদত্ত হেদায়েতই সত্যিকারের হেদায়েত। আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, যেন আমরা রাব্বুল আলামীনের সামনে নতি স্বীকার করি। —সূরা আনআম (০৬) : ৭১
(খালেদ আবূ সালেহ সংকলিত ‘আলহারিবাত মিনাল জাহীম’ থেকে অনুবাদ, মাওলানা শাহাদাত সাকিব)